মানুষ কেন রেগে যায়? জানুন রাগের কারণ ও তা নিয়ন্ত্রণের উপায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
৩ আগস্ট, ২০২৫ এ ১১:০৫ এএম
রাগের পেছনের আসল কারণ উন্মোচন।  ছবি : সংগৃহীত

রাগের পেছনের আসল কারণ উন্মোচন। ছবি : সংগৃহীত

রাগ একটি স্বাভাবিক ও মানবিক আবেগ, তবে এটি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা ব্যক্তিগত জীবন, সম্পর্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। অনেকেই জানেন না, হঠাৎ রেগে যাওয়ার পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে একাধিক মানসিক কারণ, অভিজ্ঞতা এবং আবেগিক অসামঞ্জস্য।

আমরা রাগ প্রকাশ করি নানা পরিস্থিতিতে—কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবে, কখনো অভ্যাসবশত। কিন্তু কেন? কখনো ছোট একটি ভুল মন্তব্যেও আমরা চটে যাই, কখনো আবার বড় অপমানকেও গিলে নিই নিরবভাবে। এটি নির্ভর করে আমাদের মানসিক স্থিতি, পূর্ব অভিজ্ঞতা, প্রত্যাশা ও আবেগিক সহনশীলতার উপর।

রাগকে বোঝা ও বিশ্লেষণ করা মানেই নিজের ভিতরকার মানসিক সংকেতগুলো বোঝা। চলুন জেনে নেই, মানুষ কেন রেগে যায়:

 ১. আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া
রাগ অনেক সময় জন্ম নেয় নিজেকে রক্ষা করার তাগিদ থেকে। যখন আমরা মানসিকভাবে হুমকির সম্মুখীন হই বা নিজেকে দুর্বল মনে করি, তখনই রাগ আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে আবির্ভূত হয়।

২. অবমূল্যায়ন ও তুচ্ছতা
কারও গুরুত্ব না দেওয়া, চাওয়া-পাওয়াকে তুচ্ছ করে দেখা, অথবা অর্জনকে স্বীকৃতি না দেওয়া—এসব অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নিতে পারে গভীর ক্ষোভ। রাগ তখন নিজের মূল্যবোধের প্রতিক্রিয়া।

 ৩. প্রতারণা ও নিয়ন্ত্রণ হারানো
আপনি যদি বুঝতে পারেন, কেউ আপনাকে প্রতারিত করছে বা আপনার জীবন নিয়ন্ত্রণ করছে, তখন রাগ একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে আসবে। এটি অপমানবোধ এবং নিরাপত্তাহীনতার সম্মিলিত বহিঃপ্রকাশ।

৪. ব্যর্থতা ও দায় এড়ানো
আমরা অনেক সময় নিজের ভুল ঢাকতে রেগে যাই। নিজের অপরাধবোধ বা দায়িত্ববোধকে আড়াল করার জন্য রাগকে ব্যবহার করি যেন সেটি আমাদের ব্যর্থতাকে ঢেকে দেয়।

 ৫. প্রত্যাখ্যান ও অবহেলা
প্রিয়জনের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়া বা অবহেলিত বোধ করা আমাদের আত্মসম্মানে আঘাত করে। তখন রাগ এক ধরনের কষ্টের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৬. অভ্যাসগত প্রতিক্রিয়া
অনেকেই এমন পরিবার বা সমাজে বেড়ে ওঠে, যেখানে রাগ ছিল মূল প্রতিক্রিয়া। তারা প্রায়ই নিজের অজান্তেই রাগের অভ্যাস গড়ে তোলে এবং যে কোনো সমস্যায় সেই অভ্যাসই মাথাচাড়া দেয়।

 ৭. ঈর্ষা, হীনম্মন্যতা ও অপূর্ণতা
অন্যের সফলতা, সৌভাগ্য বা সামাজিক অবস্থান দেখে ঈর্ষা অনুভব হওয়া খুব স্বাভাবিক। তবে এই অনুভূতি যদি পূরণ না হয় বা দমন করা না যায়, তবে তা রূপ নেয় রাগে।

রাগ দুর্বলতা নয়, বরং এটি আত্মসম্মান, অসন্তুষ্টি ও আবেগের মিশ্র প্রকাশ। তবে এর প্রকৃতি ও প্রভাব বুঝে, এটি কীভাবে প্রকাশ করা হবে তা নির্ধারণ করাটাই মূল বুদ্ধিমত্তা। রাগ যেন মানুষকে ধ্বংস না করে, বরং আত্মবিশ্লেষণের দরজা খুলে দেয়—সেদিকেই মনোযোগ দেওয়া জরুরি।

রাগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আগে বুঝতে হবে এর মূল কারণ। প্রয়োজন হতে পারে কাউন্সেলিং, মেডিটেশন, কিংবা নিজের মানসিক অবস্থার নিরপেক্ষ মূল্যায়ন। কারণ রাগ যদি চেপে রাখা হয় বা ভুল পথে প্রকাশ পায়, তাহলে তা একসময় মানসিক অসন্তুলন ও সম্পর্কের ভাঙন ডেকে আনতে পারে।


আজকের প্রথা/মেহেদি-হাসান