আসন সংকট নিরসনে মিত্রদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসছে বিএনপি

রাজনীতি ডেস্ক
রাজনীতি ডেস্ক
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ এ ৮:৪০ এএম
বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আসন বণ্টন নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আসন বণ্টন নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে।

 

 বিএনপি সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে অংশ নিতে পাঁচটি রাজনৈতিক জোটের অন্তত ১৫ জন শীর্ষ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণফোরামের শীর্ষ নেতারা। তারা  ইতোমধ্যে আমন্ত্রণ পেয়েছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মিত্র জোটের একাধিক নেতা জানান, আসন বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের অস্বস্তি দূর করতে তারা দ্রুত বিএনপির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় বসতে চান। তাদের বক্তব্য, বাইরে যেন কোনো নেতিবাচক বার্তা না যায়। বরং বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনৈতিক কর্মকৌশল এগিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, মাত্র এক দিন আগে পল্টনে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে ২৯টি দলের নেতাদের নিয়ে মিত্রদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপস্থিত নেতারা। তারা অভিযোগ করেন, বিএনপি আলোচনা ছাড়াই একতরফাভাবে ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে—যা যুগপৎ আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বৈঠকের পর গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “বিএনপি তীরে এসে তরী ডুবাতে চাইছে। তারা মিত্রদের মূল্যায়ন না করে দুই ধাপে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, যা আমাদের ক্ষুব্ধ করেছে। বিএনপি কি সত্যিই একলা চলো নীতি নিচ্ছে—এটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “জামায়াত যেখানে নতুন বন্ধু বাড়াচ্ছে, বিএনপি সেখানে মিত্রদের কমিয়ে দিচ্ছে—এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।”

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “নির্বাচনের তফসিল সামনে, অথচ বিএনপির সঙ্গে এখনও আমাদের আলোচনাই হলো না। বিএনপি ২৭২ আসনে প্রার্থী দিয়েছে, তাহলে মিত্ররা কোথায় দাঁড়াবে? এগুলো স্পষ্ট করতে হবে।”

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বিএনপির আরেকটি বৈঠক হয়। তবে সেখানেও আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই সাইফুল হকসহ ওই দলের নেতারা বেরিয়ে যান।

নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ইতোমধ্যে মোট ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এখনও ২৮টি আসন খালি রয়েছে। বিএনপি জানিয়েছে, এই আসনগুলোর বেশিরভাগ মিত্রদের জন্য রাখা হয়েছে। তবে মিত্ররা অভিযোগ করছেন—তারা মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকা দেওয়ার পরও বিএনপি তাদের না জানিয়েই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে, যা বিরক্তি ও অনাস্থা তৈরি করেছে।

বিএনপির একাধিক নেতার দাবি, দলটি কোনোভাবেই মিত্রদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াতে চায় না। বরং ঐক্য রক্ষায় শিগগিরই সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে, যাতে নির্বাচনে যুগপৎ কৌশল অক্ষুণ্ন থাকে।

আসন বণ্টন নিয়ে সৃষ্টি হওয়া অস্বস্তি কাটাতে বিএনপির এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আলোচনায় সমাধান মিললে বিরোধ কমবে, না হলে মিত্রদের অসন্তোষ আরও বাড়তে পারে—যা নির্বাচনের আগে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।