পাকিস্তান পাত্তাই পেল না বাংলাদেশের কাছে


ছবি : সংগৃহীত
মিরপুরের পরিচিত কন্ডিশনে ফিরে যেন হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেল বাংলাদেশ। সর্বশেষ পাকিস্তান সফরে স্বাগতিকদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল টাইগাররা। তবে এবার ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কা সিরিজের ধারাবাহিকতা টেনে আনলো লাল-সবুজের দল। লঙ্কায় প্রথম টি-টোয়েন্টি হারের পর ঘুরে দাঁড়িয়ে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও জয় ধরা দিল টাইগারদের হাতে।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ৭ উইকেট আর ২৭ বল হাতে রেখেই হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। এটি টানা তৃতীয় টি-টোয়েন্টি জয় বাংলাদেশের।
বল হাতে বাজিমাত টাইগারদের
বাংলাদেশের জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বোলাররা। দুর্বোধ্য মিরপুরের উইকেট দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানরা। পাকিস্তানকে ১৯.৩ ওভারে মাত্র ১১০ রানেই অলআউট করে ফেলে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন এবং শুরুতেই স্পিন আক্রমণ শুরু করেন। শেখ মেহেদী হাসান প্রথম ওভারেই সুযোগ তৈরি করেন। তার চতুর্থ বল স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আকাশে তুলেছিলেন ফখর জামান, কিন্তু শর্ট ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ ফেলেন তাসকিন। ৪ রানে জীবন পান ফখর।
দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম চার বলে ৯ রান দিয়ে বসেন তাসকিন। তবে পঞ্চম বলেই ফাইন লেগে মোস্তাফিজের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাইম আইয়ুবকে (৪ বলে ৬) ফেরান তিনি।
তৃতীয় ওভারে মোহাম্মদ হারিস (৩ বলে ৪) শেখ মেহেদীর বলে কাউ কর্নারে ক্যাচ দেন শামীম পাটোয়ারিকে। এরপর পাকিস্তান ৩২ রানে ২ উইকেট হারায়।
পঞ্চম ওভারে সালমান আগা খেলতেই পারছিলেন না তানজিম হাসান সাকিবকে। টানা চার বল মিস করার পর একটি চিপ শটে উইকেটরক্ষক লিটনের ক্যাচ হয়ে ফেরেন পাকিস্তান অধিনায়ক (৯ বলে ৩)।
পরের ওভারে বল হাতে নেন মোস্তাফিজ। তার প্রথম বলেই রানের খাতা না খুলেই সাজঘরে ফেরেন হাসান নওয়াজ। পাওয়ার প্লে শেষে পাকিস্তানের স্কোর: ৬ ওভারে ৪ উইকেটে ৪১ রান।
এরপর রানআউটে কাটা পড়েন মোহাম্মদ নওয়াজ (৩)। ফখরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে থ্রো পেয়ে নন-স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্প ভেঙে দেন শেখ মেহেদী।
পাকিস্তানের স্কোর যখন ৫০ ছোঁয়নি, তখনই পড়ে যায় ৫ উইকেট।
একপ্রান্ত ধরে চেষ্টা চালিয়ে যান ফখর জামান। তবে খুশদিল শাহের সঙ্গে বোঝাপড়ার অভাবে তিনিও রানআউট হয়ে যান। তাসকিনের থ্রোতে লিটনের হাতে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন ফখর, ৩৪ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় করেন ৪৪ রান।
এরপর কিছুটা লড়াই করেন খুশদিল শাহ। তবে ২৩ বলে ১৮ রান করে তিনি ফেরেন মোস্তাফিজের স্লোয়ারে মিসটাইমড শটে, মিডঅফে রিশাদের হাতে ক্যাচ হন তিনি। ফাহিম আশরাফও (৯ বলে ৫) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি, উইকেট দেন তাসকিনকে।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। মোস্তাফিজ ৪ ওভারে মাত্র ৬ রানে নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন তানজিম হাসান সাকিব ও শেখ মেহেদী হাসান।
ব্যাটিংয়ে স্থিরতা এনে দিলেন হৃদয়-ইমন
মাত্র ১১১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না বাংলাদেশের। ইনিংসের শুরুতেই সাজঘরে ফেরেন তানজিদ হাসান তামিম ও অধিনায়ক লিটন দাস। অভিষিক্ত বাঁহাতি পেসার সালমান মির্জার বলে মিডউইকেটে হুক করতে গিয়ে ক্যাচ দেন তামিম (৪ বলে ১)। সালমানের পরের ওভারে লিটন দাসও (৪ বলে ১) স্লিপে ক্যাচ দেন। মাত্র ৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
তবে এরপর দুর্দান্ত জুটি গড়েন তাওহিদ হৃদয় ও পারভেজ হোসেন ইমন। তৃতীয় উইকেটে ৬২ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়ে দলের ভিত গড়ে তোলেন তারা। আব্বাস আফ্রিদির বলে বোল্ড হওয়ার আগে হৃদয় করেন ৩৭ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৬ রান।
অন্যদিকে পারভেজ হোসেন ইমন খেলেন দায়িত্বশীল ইনিংস। ফাহিম আশরাফকে ছক্কা মেরে ৩৪ বলে পূরণ করেন অর্ধশতক। শেষ পর্যন্ত ৩৯ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৫৬ রানে অপরাজিত থাকেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
শেষ দিকে জাকের আলী ৯ বলে ১১ রান করে তার সঙ্গী হন, এবং বাউন্ডারি মেরে নিশ্চিত করেন বাংলাদেশের জয়।
স্কোর সংক্ষেপে:
পাকিস্তান: ১১০/১০ (১৯.৩ ওভার)
বাংলাদেশ: ১১৪/৩ (১৫.৩ ওভার)
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: বাংলাদেশ ১-০ তে এগিয়ে