যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কচাপে কূটনৈতিক কৌশল নিচ্ছে বাংলাদেশ


সফট ডিপ্লোমেসিতে শুল্ক সঙ্কট মোকাবিলার চেষ্টা বাংলাদেশের । ছবি সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের ফলে বিপাকে পড়েছে দেশ। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্ক কার্যকর হলে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, চামড়া এবং হালকা প্রকৌশলসহ বিভিন্ন খাতে রপ্তানি কমে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক আন্তর্জাতিক ক্রেতা এখন ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া কিংবা মেক্সিকোর দিকে ঝুঁকছেন, যা ব্যবসায়িক অর্ডারে সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার বেছে নিয়েছে ‘সফট ডিপ্লোমেসি’র পথ। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যদিও এর দাম রাশিয়ার গমের তুলনায় প্রতি টনে প্রায় ৫ ডলার বেশি। সরকারের দৃষ্টিতে এটি শুধু খাদ্যশস্য আমদানি নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়ার কৌশল।
সরকারি ক্রয় কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এই আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। আমদানিকৃত গম যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাডমেরি ইন্টারন্যাশনাল ইনকরপোরেটেড থেকে নেওয়া হবে, সরকার-টু-সরকার (G2G) ভিত্তিতে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে আমাদের সদিচ্ছার বার্তা দেবে। আমরা চাই, তারা আমাদের পণ্যের ওপর আরোপিত বাড়তি শুল্ক পুনর্বিবেচনা করুক।” তিনি বলেন, “দামে কিছুটা বাড়তি হলেও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক রক্ষা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের লক্ষ্যে এটি একটি বিনিয়োগ।”
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে পেশাদার লবিস্ট নিয়োগের প্রস্তাবও আলোচনায় এসেছে, যদিও এখনো সরকারের অভ্যন্তরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ সফট পাওয়ার টুল হিসেবে কাজ করতে পারে। কিন্তু এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক রাজনৈতিক বাস্তবতার ওপর। চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের গবেষক এম হেলাল আহমেদ বলেন, “শুধু গম আমদানির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি পরিবর্তনের আশা করা বাস্তবসম্মত নয়। এর জন্য উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক সংলাপ এবং সম্ভব হলে প্রভাবশালী লবিস্ট নিয়োগ অপরিহার্য।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান বাণিজ্য বিশ্বে শুধু সস্তা রপ্তানি নয়—আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কৌশলই আসল শক্তি।