জিইডি প্রতিবেদন

অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের স্পষ্ট ইঙ্গিত

অর্থনীতি ডেস্ক
অর্থনীতি ডেস্ক
৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ এ ৬:৩১ এএম
জিইডির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের আশাব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

জিইডির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের আশাব্যঞ্জক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

২০২৫ অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পুনরুদ্ধারের ইতিবাচক লক্ষণ দৃশ্যমান হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) প্রকাশিত “বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫” প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। ধীরগতির প্রবৃদ্ধির আশঙ্কার মধ্যেও বর্তমান সূচকগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বড় উন্নয়ন সহযোগীরা চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আগের বছরের তুলনায় কম হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। তবে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতার পথে ফিরছে। বাজারে চাহিদা, আমদানি ও উৎপাদন কার্যক্রমে পুনরুজ্জীবনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, যা সার্বিকভাবে অর্থনীতির স্বাস্থ্যে ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক ২০২৫ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৩ থেকে ৪ দশমিক ১ শতাংশের মধ্যে হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে, আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৩ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আভাস দিয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২৬ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৫ দশমিক ১ থেকে ৫ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে, যদি চলমান নীতিগত সহায়তা অব্যাহত থাকে।

বাংলাদেশের বহিঃখাতের পারফরম্যান্সকে প্রতিবেদনে ইতিবাচক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ, স্থিতিশীল আমদানি এবং মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানির পুনরুদ্ধার বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরার সম্ভাবনা তৈরি করছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

রপ্তানি আয়ে স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা, নীতিগত মান রক্ষা এবং বাজার বহুমুখীকরণের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। তিন মাসের বেশি আমদানির ব্যয় মেটাতে সক্ষম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমান অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে, যা বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে জুন মাসে রাজস্ব আহরণে সাময়িক ধাক্কার কথাও তুলে ধরা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পুনর্গঠন সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে কর্মবিরতির কারণে রাজস্ব আদায় ব্যাহত হয়। পরে কর্মসূচি প্রত্যাহার করায় রাজস্ব সংগ্রহ স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

জিইডি জানিয়েছে, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনঃস্থাপন এবং আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রধান চ্যালেঞ্জ। দুর্বল বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্প কার্যক্রমকে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও রেমিট্যান্স, রপ্তানি এবং উৎপাদন খাত বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প ভবিষ্যতেও প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটির উপসংহারে বলা হয়েছে, সময়োপযোগী কাঠামোগত সংস্কার, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান এবং সমন্বিত নীতি সহায়তা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরও স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারবে। একই সঙ্গে উদ্ভাবনভিত্তিক উন্নয়ন কৌশল দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতিকে আরও শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সহায়তা করবে।