কেয়ামতের পূর্বলক্ষণ ও ফোরাত নদীর রহস্য


ছবি : সংগৃহীত
আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিনকে নানাভাবে অভিহিত করেছেন—বিচার দিবস, ফায়সালার দিন, হিসাবের দিন, মহাসমাবেশের দিন, পরিতাপের দিন এবং পুনরুত্থান দিবস। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে কিয়ামতের বিভীষিকাময় রূপ তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, সেদিন মানুষ হবে বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের মতো এবং তারা নিজেদের নিকটতম আত্মীয়-স্বজনকেও এড়িয়ে চলবে। (সুরা কারিয়াহ: ৪, সুরা আবাসা: ৩৩-৩৭)।
মহাগ্রন্থে উল্লেখিত সেই ভীতিকর দিনের আলামত নিয়ে মানুষের মনে দীর্ঘদিন ধরে কৌতূহল রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর হাদিসে কিয়ামতের পূর্বলক্ষণসমূহ স্পষ্ট করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম বড় আলামত হলো ফোরাত নদীর পানি শুকিয়ে গিয়ে সেখান থেকে স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচিত হওয়া। সাম্প্রতিক কালে নদীটির পানির স্তর হ্রাস পাওয়ায় বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী ফোরাত তুরস্ক থেকে উৎপন্ন হয়ে সিরিয়া ও ইরাক অতিক্রম করে দজলা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে পারস্য উপসাগরে পতিত হয়েছে। এ নদী হাজার বছর ধরে এ অঞ্চলের সভ্যতা ও কৃষিকাজের প্রাণ হিসেবে বিবেচিত।
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেছেন—“অচিরেই ফোরাত নদী শুকিয়ে যাবে এবং সেখান থেকে স্বর্ণের পাহাড় উন্মোচিত হবে। যে সে সময়ে উপস্থিত থাকবে, সে যেন তা গ্রহণ না করে।” (বোখারি: ৭১১৯)। অপর এক হাদিসে উল্লেখ আছে, “কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না ফোরাত নদী থেকে স্বর্ণের পাহাড় প্রকাশ পাবে। মানুষ তা নিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে এবং প্রতিটি দলের শতকরা নিরানব্বই জন নিহত হবে।” (মুসলিম: ২৮৯৪)।
ইসলামি আলেমদের মতে, এ হাদিসের ব্যাখ্যা ভিন্ন ভিন্নভাবে এসেছে। কেউ বলেন, নদীর স্থানেই একদিন স্বর্ণের খনি প্রকাশ পাবে। কেউ বলেন, নদীর তলদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উন্মোচিত হবে। আবার কেউ কেউ একে রূপক অর্থে ‘কালো স্বর্ণ’ অর্থাৎ তেলের প্রতীক মনে করেছেন। তবে হাদিসে সরাসরি ‘যাহাব’ শব্দ ব্যবহৃত হওয়ায় বেশিরভাগ মুহাদ্দিস এটিকে স্বর্ণ হিসেবেই ব্যাখ্যা করেছেন।
হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রাহ.) উল্লেখ করেছেন, এই আলামত ইমাম মাহদির আগমনের পূর্বে প্রকাশ পাবে। তাই মুসলিম উম্মাহর কর্তব্য হলো—হাদিসের আলোকে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা, ভ্রান্ত ব্যাখ্যা থেকে দূরে থাকা এবং সৎকর্মে মনোযোগ দেওয়া।