ইন্টারনেটের ধীরগতি ও উচ্চ করের চাপে ভুগছে বাংলাদেশ

প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রযুক্তি ডেস্ক
১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ এ ৯:১৬ এএম
রাজধানীতে জিএসএমএ-এর গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি:সংগৃহীত

রাজধানীতে জিএসএমএ-এর গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি:সংগৃহীত

বাংলাদেশে অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ স্পেকট্রাম মূল্য ও করের চাপ মোবাইল নেটওয়ার্ক খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে ইন্টারনেটের গতি কমছে, ৫জি প্রযুক্তির বিস্তারে বিলম্ব ঘটছে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সম্প্রতি মোবাইল অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত অনুষ্ঠানে “বাংলাদেশে স্পেকট্রাম মূল্যের প্রভাব” শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি) ফয়েজ আহমদ তাইয়্যেব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আব্দুন নাসের খান, বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী, অতিরিক্ত সচিব মো. জহিরুল ইসলাম, বিটিআরসি কমিশনার (স্পেকট্রাম) মাহমুদ হোসেন এবং জিএসএমএ এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান জুলিয়ান গোরম্যান।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে অপারেটরদের বার্ষিক রাজস্বের প্রায় ১৬ শতাংশ স্পেকট্রাম ফির পেছনে ব্যয় হচ্ছে, যেখানে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে এ হার গড়ে ১০ শতাংশ এবং বিশ্ব গড় মাত্র ৮ শতাংশ। ভোক্তা কর, সারচার্জ ও রাজস্ব ভাগাভাগি যোগ করলে আর্থিক বোঝা দাঁড়াচ্ছে বাজার আয়ের প্রায় ৫৫ শতাংশে, যা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ।

গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের নবায়ন ও নতুন ব্যান্ড নিলামে উচ্চমূল্য বহাল থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে স্পেকট্রাম খরচ অপারেটর আয়ের ২১ শতাংশে পৌঁছাবে। এতে অপারেটরদের অনেককে স্পেকট্রামের অংশ ফেরত দিতে বা নতুন ব্যান্ড কিনতে বিরত থাকতে হবে, যার ফলে ইন্টারনেট গতি, নেটওয়ার্কের মান ও ৫জি গ্রহণ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্পেকট্রাম ফি এশিয়া-প্যাসিফিক গড়ের সাথে সামঞ্জস্য করে ৫০% হ্রাস করা হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে গড় ডাউনলোড গতি ১৭% বাড়বে, ৯৯% নাগরিক ৫জি কাভারেজের আওতায় আসবে এবং অর্থনীতিতে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যুক্ত হবে। বৈশ্বিক গড়ের সাথে সামঞ্জস্য করলে (৭৫% হ্রাস) ৪জি গতি ২২% বাড়বে, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ত্বরান্বিত হবে এবং অতিরিক্ত ৪৫ বিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সুফল আসবে।

জিএসএমএ এশিয়া প্যাসিফিকের প্রধান জুলিয়ান গোরম্যান বলেন, “মোবাইল সংযোগ বাংলাদেশের ডিজিটাল স্বপ্নের অক্সিজেন। অথচ অপারেটররা বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ স্পেকট্রাম ও করের চাপ বহন করছে। সাশ্রয়ী মূল্য ও আধুনিক লাইসেন্স শর্ত নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।”

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সময়োপযোগী নীতি সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশে দ্রুত, সাশ্রয়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সংযোগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।