উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনা

মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে - আরও ৪ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
২২ জুলাই, ২০২৫ এ ৩:১০ এএম
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, চলে গেল আরও ৪ শিক্ষার্থী : ছবি সংগৃহীত

বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, চলে গেল আরও ৪ শিক্ষার্থী : ছবি সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া বিমান বিধ্বস্তের মর্মান্তিক ঘটনার পর মৃত্যু মিছিল যেন থামছেই না। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে আরও চার শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান। এই চার শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ জনে।

নিহত শিক্ষার্থীরা হলেন: এরিকসন (১৩), আরিয়ান (১৩), নাজিয়া (১৩) এবং সায়ান ইউসুফ (১৪)। ডা. শাওন জানান, এরিকসনের শরীরের ১০০ শতাংশ, আরিয়ানের ৮৫ শতাংশ, নাজিয়ার ৯০ শতাংশ এবং সায়ানের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।

তবে এই মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সরকারি তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ২০ জন। তাদের মতে, সোমবার রাত দেড়টার দিকে আটজনের লাশ শনাক্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আইএসপিআরের রাত ৮টার দিকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মোট আহত ১৭১ জন এবং নিহত ২০ জন। আহত ও নিহতরা রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেখানে প্রতিটি হাসপাতালের আলাদা করে আহত ও নিহতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়:

১. কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল: আহত ৮ জন, নিহত নেই
২. জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট: আহত ৭০ জন, নিহত ২
৩. ঢাকা মেডিকেল কলেজ: আহত ৩ জন, নিহত ১
৪. সিএমএইচ-ঢাকা: আহত ১৭ জন, নিহত ১২
৫. কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল: আহত ১ জন, নিহত ২
৬. লুবনা জেনারেল হাসপাতাল ও কার্ডিয়াক সেন্টার: আহত ১১ জন, নিহত ২
৭. উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল: আহত ৬০ জন, নিহত ১
৮. উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল: আহত ১ জন, নিহত নেই

তবে এই তথ্যের পরপরই রাত সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে জানানো হয় আরও তিনজন—মাহেরীন চৌধুরী (৪০), আফনান (১৪) এবং আব্দুল্লাহ সামিন (১৪)—চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। পরে রাত সোয়া ৩টার দিকে আরও চার শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর আসে, যাদের নাম উল্লিখিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুর ১টার কিছু পর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়, যা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের ভেতরে স্কুলপড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী থাকায় হতাহতের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়।

বিমান দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উদ্ধারকাজে অংশ নেয়। আহতদের মধ্যে অনেককে হেলিকপ্টারযোগে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ৪২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকের অবস্থা সংকটাপন্ন। পুরো দেশ এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকাহত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।