মনে মনে খারাপ কিছু চিন্তা করলে গোনাহ হয় কি না? ইসলামি ব্যাখ্যা


ছবি : সংগৃহীত
মানুষ আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তবে এই মানুষই মাঝে মাঝে নিজের অন্তরে এমন কিছু কু-চিন্তা লালন করে, যা পাপের দিকে ধাবিত করে। নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় হোক বা নির্জনে বসে থাকা অবস্থায়, হঠাৎ এমন চিন্তা এসে যায় যা নিজের কাছেই লজ্জাজনক মনে হয়। তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে—শুধু মনে মনে খারাপ কোনো চিন্তা এলেই কি গোনাহ হয়ে যায়? আল্লাহ কি এর জন্য হিসাব নেবেন?
ইসলামি শরিয়তের আলোকে এ বিষয়ে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়। ইসলামী স্কলারদের মতে, মনে মনে খারাপ চিন্তাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
প্রথমত, কেউ যদি খারাপ কাজ করার পরিকল্পনা করে, যেমন—পাপাচার, মদ পান কিংবা অন্যকে আঘাত করা, তবে পরবর্তীতে আল্লাহর ভয়ে যদি সে সেই চিন্তা থেকে ফিরে আসে, তাহলে আল্লাহ তার এই বিরত থাকার জন্য আমলনামায় সওয়াব লিখে দেন। অর্থাৎ, শুধুমাত্র চিন্তার জন্য তার গোনাহ হয় না; বরং তা পরিত্যাগ করায় নেকি যুক্ত হয়।
দ্বিতীয়ত, কেউ যদি মনে মনে কারও চরিত্র হনন করে, কিংবা অশ্লীল কল্পনায় ডুবে যায়, তবে তা গোনাহ হিসেবে লিখে রাখা হয়। কারণ, সে অন্তরে জেনা বা অন্যের মানহানি করেছে, যা ইসলামে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে—আল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি ভালো কাজের ইচ্ছা করে কিন্তু তা করতে পারে না, তার জন্য একটি পূর্ণ নেকি লেখা হয়। আর যদি তা সম্পন্ন করে, তার আমলনামায় দশ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত নেকি লেখা হয়। অন্যদিকে, কেউ যদি মন্দ কাজের ইচ্ছা করে কিন্তু তা না করে, তার জন্যও একটি নেকি লেখা হয়। আর যদি সে তা বাস্তবায়ন করে, তবে একটি মন্দ কাজ লেখা হয়।” (সহিহ বোখারি: ৬৪৯১, সহিহ মুসলিম: ১৩১)
এ থেকে বোঝা যায়, কেবল মনের মধ্যে আসা খারাপ চিন্তা সবসময় গোনাহ নয়। তবে যদি তা চরিত্র হনন বা অশ্লীল কল্পনার মতো গুরুতর পর্যায়ে যায়, তবে তা গোনাহ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। তাই অন্তরকে সবসময় শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে মুক্ত রাখতে হবে এবং আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে মনকে পবিত্র রাখা জরুরি।