বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার পাবেন যেসব নেতা


ছবি : সংগৃহীত
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। দীর্ঘ ১৮ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন নতুন উদ্যমে উজ্জীবিত। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলটির ভেতরে এক নতুন প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে, আর এ সময়কে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে।
এবার নির্বাচনকে ঘিরে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে বিএনপি। তফসিল ঘোষণার আগেই ৩০০ আসনের অন্তত ৭০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করে ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। নীতিনির্ধারকদের মতে, আগেভাগেই প্রার্থী নির্ধারণ করা গেলে মাঠপর্যায়ের বিভাজন ও দ্বন্দ্ব অনেকটাই কমে যাবে। এতে প্রার্থীরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন এবং ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান তৈরি হবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। তারা মাঠপর্যায়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই করছেন। বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে আসনভিত্তিক তথ্য ও বাস্তব চিত্র। একাধিক শীর্ষ নেতা নিশ্চিত করেছেন, তফসিল ঘোষণার আগেই অন্তত ৭০ শতাংশ আসনে একক প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে।
নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর একক প্রার্থী চূড়ান্ত করলে ভেতরে ভেতরে নানা জটিলতা তৈরি হতে পারে। কারণ দীর্ঘ সময় নির্বাচন থেকে দূরে থাকার ফলে দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়নের প্রতিযোগিতা বাড়বে, যা শেষ মুহূর্তে দ্বন্দ্ব ও গ্রুপিংয়ের জন্ম দিতে পারে। তাই এবার পূর্ব প্রস্তুতিতেই গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি।
তাদের পরিকল্পনা হলো, নির্বাচনের আগেই একক প্রার্থীর নেতৃত্বে সংগঠনকে সুসংহত করা এবং জনগণের কাছে দলের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা। এর মাধ্যমে দলীয় ঐক্য দৃঢ় হবে এবং ভোটের মাঠে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, এতে দলের কর্মী-সমর্থকরাও আরও অনুপ্রাণিত হবেন।
তবে এবারের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় চমক থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্থায়ী কমিটির এক সদস্য। তিনি জানিয়েছেন, কিছু আসনে এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী দেওয়া হবে, যাদের নাম অনেকের ধারণাতেও নেই। আবার কিছু সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী ত্যাগী, সৎ এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
দলটির গঠনতন্ত্রের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য পার্লামেন্টারি বোর্ডই প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি এ দায়িত্ব পালন করবে এবং বোর্ডের সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত। জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন এবং তখনই আনুষ্ঠানিকভাবে একক প্রার্থীর তালিকা প্রকাশিত হবে।
এদিকে দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলও সমানতালে প্রস্তুতি নিচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই ২৯৬ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বিভাগীয় পর্যায়ে সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করে প্রার্থীর তালিকা প্রস্তুত করছে। খেলাফত মজলিস ও গণঅধিকার পরিষদও বেশ কিছু আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর ফলে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনী সমীকরণ আরও জটিল হয়ে উঠছে।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের সাম্প্রতিক বৈঠকে ভোটারদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তারা ‘ডোর টু ডোর’ প্রচারণার মাধ্যমে রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কারের রূপরেখা, অতীতের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ এবং আগামী দিনের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে চায়। দলটির লক্ষ্য হলো নির্বাচনের মাঠে জনগণের আস্থা অর্জন করা এবং দেশের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
সবশেষে বিএনপি মনে করছে, একক প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে আসনভিত্তিক জটিলতা হ্রাস, দলের ভেতর ঐক্য স্থাপন এবং জনগণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপন—এই তিনটি কৌশল তাদের নির্বাচনী সাফল্যের সম্ভাবনাকে অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকায় কোন কোন নেতার নাম উঠে আসে এবং কারা বাদ পড়েন।