আসন বণ্টন নিয়ে চিন্তিত বিএনপির মিত্র দলগুলি


ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে জোরালো প্রস্তুতি। বিএনপির মিত্র দলগুলি ইতোমধ্যে দুই শতাধিক আসনে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা দিয়েছে, যেখানে অনেক আসনে মিত্রদের প্রার্থীরা ইতিমধ্যে প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছেন। তবে বিএনপির নিজস্ব হেভিওয়েট প্রার্থীদের উপস্থিতির কারণে এই আসন বণ্টন নিয়ে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মিত্র দলগুলির শীর্ষ নেতারা দ্রুত বিএনপির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে আগ্রহী, কিন্তু একই আসনে বিএনপির একাধিক শক্তিশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় তারা চিন্তিত।
বিএনপির হেভিওয়েট মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়, ত্যাগী ও এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। দলের তৃণমূল পর্যায়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে যে, বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত আসনগুলোতে যদি দলীয় নেতাদের পরিবর্তে মিত্রদের প্রার্থী দেওয়া হয়, তাহলে সেই আসনগুলো হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পেলে কোনো নেতা যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে নামেন, তাহলে ভোট বিভাজনেরও শঙ্কা দেখছেন বিশ্লেষকরা।
বিএনপির নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মিত্রদের যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হবে, সেসব আসনে বিএনপির কোনো নেতা প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবেন না। এই বিষয়ে দলীয় হাইকমান্ডের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে এবং কোনো নেতা যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, তাহলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিকনির্দেশনায় এই মাসের মধ্যেই মিত্রদের কতটি এবং কোন কোন আসনে ছাড় দেওয়া হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
বগুড়া-২ আসনকে ঘিরে চলমান পরিস্থিতি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এই আসন থেকে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না প্রস্তুতি নিলেও, বিএনপির পক্ষ থেকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মীর শাহে আলমসহ একাধিক হেভিওয়েট নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী। একইভাবে ঢাকা-৮ আসনে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হকের বিপরীতে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের প্রস্তুতির মধ্যেও বিএনপির একাধিক নেতা মাঠে সক্রিয়।
লক্ষ্মীপুর-১ আসনে ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তানিয়া রবের মতো মিত্র নেতাদের প্রস্তুতির মধ্যেও সংশ্লিষ্ট আসনগুলোতে বিএনপির শক্তিশালী দাবিদার রয়েছেন। কিশোরগঞ্জ-৫, কুমিল্লা-৭, জামালপুর-৫, ঢাকা-১৩, নড়াইল-২, চট্টগ্রাম-১৪ ও ঝালকাঠি-১ আসনেও একই ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ তার এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন যে মিত্রদের সঙ্গে আলোচনায় জয়লাভের বাস্তব সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। মিত্র দলগুলির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে তারা বিএনপির সঙ্গে শিগগিরই আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত করতে চান এবং কয়েকটি আসনে ইতিবাচক সাড়াও পেয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপির হাইকমান্ড কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটিই হবে চূড়ান্ত বলে সকল পক্ষই মনে করছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সঠিক আসন বণ্টন এবং দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষা করাই আসন্ন নির্বাচনে জয়লাভের মূল চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়াতে পারে।