তিস্তার বুকে নতুন সংযোগ

গাইবান্ধায় `মওলানা ভাসানী' সেতুর স্বপ্নযাত্রা শুরু আজ

গাইবান্ধা ( জেলা ) প্রতিনিধি
গাইবান্ধা ( জেলা ) প্রতিনিধি
২০ আগস্ট, ২০২৫ এ ১০:৩৭ এএম
মওলানা ভাসানী সেতুর উদ্বোধনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ অতিথিরা। ছবি : আজকের প্রথা

মওলানা ভাসানী সেতুর উদ্বোধনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াসহ অতিথিরা। ছবি : আজকের প্রথা

উত্তর জনপদে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’র উদ্বোধন হলো আজ। গাইবান্ধার রংপুর ও কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে এ সেতুটি।

বুধবার (২০ আগস্ট) গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুর উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
এরপর হরিপুর অংশে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর দ্বার উন্মুক্ত করা হয়।

উদ্বোধনের মুহূর্তেই হাজারো মানুষ দলে দলে সেতুতে উঠে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। কেউ ছবি তুলতে, কেউবা আনন্দ ভাগাভাগি করতে ভিড় করেন সেতুর ওপর। এতে জনতার ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেগ পেতে হয়।

পরে গাড়িতে উঠে গাইবান্ধাবাসীর সঙ্গে হাসিমুখে করমর্দন করেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এসময় জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, এলজিইডি কর্মকর্তা এবং নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। নানা জটিলতা ও একাধিকবার তারিখ পরিবর্তনের পর দীর্ঘ ১১ বছর পর অবশেষে চালু হলো এই সেতু।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, সৌদি সরকারের অর্থায়ন ও চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এ সেতুর ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮৮৫ কোটি টাকা।

১৪৯০ মিটার দীর্ঘ ও ৯.৬ মিটার প্রস্থের পিসি গার্ডার সেতুটি দেশের ইতিহাসে এলজিইডির সবচেয়ে বড় সেতু। সেতুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রায় ৮০ কিলোমিটার এক্সেস সড়ক, নির্মিত হয়েছে ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু।

এ সেতুর ফলে বেলকা বাজার, পাঁচপীর, ধর্মপুর, হাট লক্ষ্মীপুর, সাল্যাপুর ও ধাপেরহাটসহ অন্তত ১০টি বাজার সরাসরি সংযুক্ত হলো। এতে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি, কৃষি, পণ্য পরিবহন ও শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে, সীমান্তবর্তী ভুরুঙ্গামারীর দূরত্ব কমবে ৪০-১০০ কিলোমিটার। এছাড়া পর্যটনেও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।

তবে সেতুর নামকরণ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাদের দাবি, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা শরিফুল্লাহ মাস্টারের নামে নামকরণ করা উচিত ছিল। কারণ তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে সেতু নির্মাণ আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন এবং ‘তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করেছিলেন।

তবে সরকার গত ১০ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সেতুর নামকরণ করে ‘মওলানা ভাসানী সেতু, গাইবান্ধা’।

সব বিতর্ক ছাপিয়ে তিস্তার দুই পাড়ের মানুষ আজ আনন্দিত। দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণের পর তাদের জীবনে নতুন যাত্রা শুরু হলো।