নাইজেরিয়ায় বোকো হারামের হত্যাযজ্ঞে নিহত ৫৫

আন্তর্জাতিক ডেষ্ক
আন্তর্জাতিক ডেষ্ক
৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ এ ৫:৩৫ এএম
ছবি:সংগৃহীত

ছবি:সংগৃহীত

নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বোর্নো প্রদেশের দারুল জামা গ্রামে বোকো হারামের হামলায় অন্তত ৫৫ জন নিহত হয়েছেন। এই গ্রামে বাসিন্দারা কয়েক বছর বাস্তুচ্যুত থাকার পর সম্প্রতি ফিরে এসেছিলেন।

ক্যামেরুন সীমান্তের কাছে অবস্থিত দারুল জামার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে সশস্ত্র জঙ্গিরা মোটরসাইকেলে এসে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। সরকার-সমর্থিত মিলিশিয়ার কমান্ডার বাবাগানা ইব্রাহিম বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, হামলায় ৬ সেনাসদস্যসহ মোট ৫৫ জন নিহত হয়েছেন।

দারুল জামার ঐতিহ্যবাহী প্রধান রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শনিবার সকাল পর্যন্ত ৭০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং আশপাশের ঝোপঝাড়ে আরও অনেক বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, জঙ্গিরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুরুষদের হত্যা করেছে, নারীদের ছেড়ে দিয়ে গেছে। প্রায় প্রতিটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০টির বেশি বাড়ি এবং ১০টি বাস ধ্বংস হয়েছে।

নাইজেরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, বোকো হারাম ও এর বিচ্ছিন্ন দল আইএসডব্লিউএপি (আইএসআইএস-এর পশ্চিম আফ্রিকার সহযোগী) জঙ্গিদের দমন করতে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বোর্নো রাজ্যে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। এক নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, এই এলাকায় বোকো হারাম কমান্ডার আলী গুলদের প্রভাব রয়েছে এবং তিনিই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বাবাগানা মালা নামে একজন বাসিন্দা, যিনি ৪৬ কিমি দূরে বামা শহরে পালিয়ে গিয়েছিলেন, জানান, সামরিক বাহিনীকে তিন দিন ধরে গ্রামের কাছে বোকো হারামের সমাবেশের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু অতিরিক্ত কোনো সৈন্য পাঠানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘তারা সৈন্যদের পরাস্ত করেছিল, যারা আমাদের সাথে বামা পালিয়ে গিয়েছিল।’

অনেক নিহত ব্যক্তি সম্প্রতি বামার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বাস্তুচ্যুত ক্যাম্প থেকে স্থানান্তরিত পরিবারগুলোর সদস্য ছিলেন। হামলায় ভাইকে হারানো পাঁচ সন্তানের জননী হাজ্জা ফাতি বলেন, ‘সরকার আমাদের বলেছিল এখানে নিরাপদ থাকব। এখন আমরা আবার আমাদের স্বজনদের দাফন করছি।’

এই হামলা নাইজেরিয়ার বাস্তুচ্যুতদের গ্রামে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার নিরাপত্তা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। বোকো হারাম ২০০৯ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়ায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য রক্তক্ষয়ী লড়াই চালিয়ে আসছে। এতে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং ২০ লাখের বেশি মানুষ বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আইএসডব্লিউএপি ২০১৬ সালে বোকো হারাম থেকে আলাদা হয়েছে।

অলাভজনক সংস্থা গুড গভর্ন্যান্স আফ্রিকার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পুনরুত্থান দেখা গেছে। প্রায় ৩০০টি হামলার ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে, যার বেশিরভাগ আইএসডব্লিউএপি দ্বারা সংঘটিত। এতে প্রায় ৫০০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।