স্কুইড গেমের মতো গাজায় ভয়ংকর বাস্তবতা


ছবি : সংগৃহীত
গাজার ছোট্ট শিশু আহমেদ জিদান। লালচে চোখ, ধুলোমাখা শরীর, হাত-পা কাঁপছে। মাটিতে বসে তার সামনে মায়ের নিথর দেহ। ভোরে ছেলের জন্য খাবারের খোঁজে বের হয়েছিলেন জিদানের মা, কিন্তু ফিরে আসেন লাশ হয়ে। এই দৃশ্য যেন জনপ্রিয় কোরিয়ান ওয়েবসিরিজ স্কুইড গেম-এর বাস্তবচিত্র। পার্থক্য শুধু—সিরিজে প্রতিযোগীরা নিয়ম জেনে খেলায় অংশ নেয়, আর গাজায় মানুষ না জেনেই মৃত্যুর খেলায় বাধ্য হচ্ছে। ত্রাণের জন্য ছুটে গিয়ে যেকোনো মুহূর্তে ইসরাইলি স্নাইপারের গুলিতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে।
২৭ মে থেকে অবরুদ্ধ গাজায় মার্কিন সমর্থিত প্রতিষ্ঠান গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) শুরু করে ত্রাণ বিতরণের নামে মৃত্যুফাঁদ। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ত্রাণ নিতে না পারলেই অপেক্ষা করছে নিশ্চিত মৃত্যু। প্রথমে রাফাহ সীমান্তে শুরু হলেও ১৭ জুন খান ইউনিসে নতুন কেন্দ্র চালু হয়। তবে ঘোষিত সময়ের ঘণ্টা চার আগে গেট খোলার পরপরই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ক্ষুধার্ত মানুষ তবুও ভিড় জমায়, আর সেদিনই কমপক্ষে ৫৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন।
গাজার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষ থেকে প্রতিদিনের এই মৃত্যুখেলায় নিহত হয়েছে ৫৮৪ জন এবং আহত হয়েছেন ৪,০০০-এরও বেশি মানুষ। আশ্রয়হীন সামেহ বলেন, “শত দিনের বেশি সময় ধরে না খেয়ে আছি। ইসরাইল খাবার ঢুকতে দেয়নি, আর এখন তথাকথিত সাহায্যকেন্দ্র বসিয়েছে—এটা সাহায্য নয়, ফাঁদ।”
অন্যদিকে ওয়াদি জানান, নেটজারিমের কাছে তিনি একটি খেলাঘরের মতো কেন্দ্রে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করতে দেখেছেন ২০-৩০ হাজার মানুষকে। গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ের চাপে কাঁটাতার ডিঙিয়ে কয়েক মুহূর্তে সব শেষ হয়ে যায়। তিনি বলেন, “ক্ষুধা নয়, এখানে মৃত্যু বেশি কাছাকাছি।”
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অবরুদ্ধ গাজায় শুধু ত্রাণ আনতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১,৬৫৫ জন নিহত এবং ১১,৮০০ জন আহত হয়েছে। অনেকের মতে, স্কুইড গেম-এ যেমন ধনী শ্রেণি মৃত্যুকে বিনোদন হিসেবে উপভোগ করত, তেমনি গাজার রক্তাক্ত বাস্তবতাও বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রের কাছে নিছক রাজনৈতিক স্বার্থের খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে।