খরা ও বন্যায় বিপর্যস্ত আড়াই লাখ কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৬ জুলাই, ২০২৫ এ ৩:৫৪ এএম
আবহাওয়ার বৈপরীত্যে দেশের কৃষি খাতে চরম সংকট। ছবি : সংগৃহীত

আবহাওয়ার বৈপরীত্যে দেশের কৃষি খাতে চরম সংকট। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের কৃষকরা পড়েছেন চরম বিপাকে। দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে টানা অতিবৃষ্টিতে ফসলের মাঠ প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলে দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টির কারণে ফসল বপনই সম্ভব হচ্ছে না। এমন বৈপরীত্যপূর্ণ আবহাওয়ায় দেশের কৃষি খাত পড়েছে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জে।

সম্প্রতি নোয়াখালী, ফেনীসহ ২০ জেলায় আকস্মিক বন্যা হয়, যার ফলে ৪২৯ কোটি টাকার ফসলহানি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও নতুন করে শুরু হয়েছে অতিবৃষ্টি। এতে ফসলি জমি, বীজতলা, সবজিক্ষেত, মাছের ঘের ও হাঁস-মুরগির খামার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মৌসুমি বায়ু, নিম্নচাপ ও অতিবৃষ্টির প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকেরা নিঃস্ব প্রায়।

ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীর মুহুরী নদীতে হঠাৎ পানি বাড়ায় বহু গ্রাম প্লাবিত হয়। প্লাবনের ফলে ৮ হাজার হেক্টরের বেশি আউশ-আমন ধানসহ নানা সবজি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং প্রায় ১৩ হাজার মাছের খামার ভেসে যায়। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এই জেলায় ৫ হাজার ৫৬৪ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে এবং প্রায় ২৮ হাজার ৮০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

নোয়াখালীতে ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টিতে ৬টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে এবং শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কবিরহাট, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ ও সুবর্ণচর এলাকায় এখনও জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে। এতে আমন বীজতলা ও আগাম শীতকালীন সবজি চাষ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

উত্তরাঞ্চলে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার কৃষকেরা খরায় পুড়ছেন। বৃষ্টির অভাবে আমনের চারা রোপণ বন্ধ হয়ে গেছে। পাটচাষিরাও পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারছেন না। কৃষি কর্মকর্তারা ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিলেও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও পানির অভাবে অনেকেই নিরুপায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, আবহাওয়ার এ রকম চরম বৈপরীত্য বাংলাদেশে আগেও দেখা গেছে, তবে এবার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। নোয়াখালী অঞ্চলে প্রায় আড়াই লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরকার আমন বীজতলা, বাসাবাড়ির সবজি বাগান এবং আগাম শীতকালীন সবজি চাষে সহায়তার জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। আগামী অর্থবছরে ৭ কোটি টাকার প্রণোদনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।