হলিউডে এআই প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার

বিনোদন ডেষ্ক
বিনোদন ডেষ্ক
২ নভেম্বর, ২০২৫ এ ৯:১১ এএম
হলিউডের একটি চলচ্চিত্র স্টুডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া চিত্রনাট্য বিশ্লেষণ করা হইতেছে। ছবি: সংগৃহীত

হলিউডের একটি চলচ্চিত্র স্টুডিওতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়া চিত্রনাট্য বিশ্লেষণ করা হইতেছে। ছবি: সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র হলিউডে এক নতুন ধরনের উদ্বেগের সৃষ্টি করিয়াছে। বিশেষভাবে যাহারা পেশাগতভাবে চিত্রনাট্য পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণের কার্য সম্পাদন করেন, তাহাদের মধ্যেই এই আতঙ্ক সর্বাধিক পরিলক্ষিত হইতেছে। ঐতিহ্যগতভাবে স্ক্রিপ্ট রিডারগণ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ধারাবাহিকের গল্পের গুণগত মান যাচাই, সম্ভাব্য দুর্বলতা চিহ্নিতকরণ এবং গল্পের উন্নয়ন সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদানের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে তাহাদের মনে একটিমাত্র প্রশ্ন জাগিতেছে, এই প্রযুক্তি কি অদূরভবিষ্যতে তাহাদের কর্মসংস্থান সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করিয়া ফেলিবে?

আন্তর্জাতিক বিনোদন মাধ্যম ভ্যারাইটিতে প্রকাশিত এক বিশদ প্রতিবেদনে এই বিষয়টি উন্মোচিত হইয়াছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতিমধ্যে মানবীয় বুদ্ধিমত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কার্যকারিতা তুলনামূলকভাবে মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে এক প্রকার পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া আরম্ভ করা হইয়াছে। এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য হইলো এই নির্ধারণ করা যে, চিত্রনাট্য বিশ্লেষণ ও পরামর্শ প্রদানের ক্ষেত্রে মানুষ ও এআই-এর মধ্যে কাহার দক্ষতা অধিকতর কার্যকরী। হলিউডের এক প্রখ্যাত চলচ্চিত্র প্রযোজক মরিস চ্যাপডেলেনের বাস্তব অভিজ্ঞতা এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিকে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত করে।

মি. চ্যাপডেলেনের কার্যালয়ে নিয়মিতভাবে অসংখ্য চিত্রনাট্য জমা হইয়া থাকে। তিনি স্বীয় সক্ষমতার范围内 সপ্তাহে মাত্র তিনটি স্ক্রিপ্ট গভীরভাবে পড়িতে পারেন, এবং অবশিষ্টগুলি ইন্টার্ন অথবা চলচ্চিত্র শিক্ষার্থীদের নিকট প্রেরণ করেন। এই সমস্ত সহায়তা সত্ত্বেও কাজের চাপ সামলাইতে তিনি প্রায়শই হিমশিম খাইয়া থাকেন। এক সামাজিক অনুষ্ঠানে তাঁহার বন্ধুগণ কাজের চাপ হ্রাস করিবার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দেন। প্রাথমিকভাবে তিনি এই প্রস্তাবে কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলেন এবং এআই-এর কিছু দিক তাঁহাকে সত্যিকার অর্থে ভীতিগ্রস্ত করিত বলিয়া স্বীকার করেন।

তবে শেষপর্যন্ত তিনি 'গ্রিনলাইট কভারেজ' নামক একপ্রকার এআই-ভিত্তিক সেবা ব্যবহার করিতে সম্মত হন। এই সরঞ্জামটি বৃহৎ আকারের চিত্রনাট্যগুলি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে পড়িয়া সারসংক্ষেপ প্রদান করে। ইহা কেবল গল্পের উপাদানই বিশ্লেষণ করে না, বরং গল্পের গতি, চরিত্রায়ণ, সংলাপের মান প্রভৃতি বিভিন্ন দিক এক হইতে দশের স্কেলে নম্বর প্রদান করে। চিত্রনাট্যটি চলচ্চিত্রায়ণের জন্য উপযুক্ত কিনা, সেই সংক্রান্ত চূড়ান্ত মতামতও ইহা প্রদান করিতে সক্ষম।

এই অভিজ্ঞতার পর মি. চ্যাপডেলেন উপলব্ধি করিলেন যে, এই এআই প্রযুক্তি মানবীয় বিশ্লেষণ অথবা তাঁহার নিজস্ব মূল্যায়নের তুলনায় অধিকতর কার্যকরী ফলাফল প্রদর্শন করিতেছে। ফলস্বরূপ, চিত্রনাট্য পর্যালোচনার গতি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাইয়াছে বলিয়া তিনি উল্লেখ করিয়াছেন। তিনি ইহাকে সময় সাশ্রয়ের এক অসাধারণ মাধ্যম বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন এবং স্বীকার করিয়াছেন যে, এআই প্রযুক্তি দিনদিন আরও উন্নত ও নির্ভুল হইয়া উঠিতেছে।

হলিউডে এআই-এর এই ব্যবহার কেবল চিত্রনাট্য বিশ্লেষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নহে। চলচ্চিত্র নির্মাণের নানা পর্যায়ে ইহার প্রসার ঘটিতেছে। ভিজ্যুয়াল এফেক্টস তৈরি, অভিনেতাদের বয়সের ছাপ হ্রাস করিবার জন্য অত্যাধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার, কৃত্রিম অভিনেতা অথবা পটভূমির চরিত্র সৃষ্টি, এবং ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল ও কম্পোজিশন সংক্রান্ত রিয়েল-টাইম পরামর্শ প্রদান—এই সকল কাজেই এখন এআই সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হইতেছে। এই প্রবণতা প্রমাণ করিতেছে যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলিউড শিল্পের একটি অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে পরিণত হইয়াছে, যদিও ইহা ঐতিহ্যবাহী পেশাগত ভূমিকাগুলির জন্য এক গভীর চ্যালেঞ্জ ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করিয়াছে।