মার্কিন শুল্ক ও এনবিআরের কর্মবিরতিতে পোশাক রপ্তানি ১২% কমেছে


পোশাক রপ্তানি। ছবি : সংগৃহীত
তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের ধস নেমেছে বিদায়ী অর্থবছরের শেষ প্রান্তিকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৃহস্পতিবার রাতে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জুন পর্যন্ত তিন মাসে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৯১১ কোটি মার্কিন ডলারে, যা জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কম।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে পোশাক খাতকে একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, বাণিজ্যনীতির পরিবর্তন এবং মার্কিন শুল্ক নীতি এসব সমস্যার মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত, যা পরবর্তীতে কমে ২০ শতাংশে দাঁড়ায়, বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার স্থগিতের প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। যদিও এই অতিরিক্ত শুল্ক ৩১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে, তবুও অনিশ্চয়তা সেই সময়ের রপ্তানি সক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
এছাড়া প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ বর্তমানে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। মার্কিন বাজারে ভিয়েতনামের অতিরিক্ত শুল্ক ২০ শতাংশ, ভারতের শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ এবং চীনের শুল্ক রয়েছে ৩০ শতাংশে। ফলে মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সুযোগ কিছুটা বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির কারণে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটে, যা সময়মতো চালান পাঠাতে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করেছে। এর পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, দেশের উৎপাদন ব্যয়ের বৃদ্ধি এবং রপ্তানি বাজারে বৈচিত্র্যের অভাবও তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি প্রবাহকে ব্যাহত করেছে।
এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে মূল্য সংযোজনেও কিছুটা পতন দেখা গেছে। এ সময়ে ৯১১ কোটি ডলারের রপ্তানির বিপরীতে ৩৯৪ কোটি ডলারের কাঁচামাল আমদানি হয়, ফলে মূল্য সংযোজন দাঁড়িয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৮ শতাংশে। আগের প্রান্তিকে এই হার ছিল ৫৮ দশমিক ৯০ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন শুল্ক ছাড়ের ফলে দীর্ঘমেয়াদে রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত না হলে খাতটির টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হবে।