৫ লাখ কোটি টাকা লোপাট

আ.লীগ আমলে লুটের জন্য যেসব ব্যাংক দখল করা হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ এ ৮:৫৭ এএম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশের ব্যাংক খাত দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াতি ঋণ ও খেলাপি সমস্যার গভীর সংকটে নিমজ্জিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নজিরবিহীনভাবে ব্যাংক লুটপাট সংঘটিত হয়েছে। লুটের উদ্দেশ্যে অন্তত ১১টি ব্যাংক দখল করা হয় এবং ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৫ লাখ কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জালিয়াতরা আমানতকারীদের টাকাই আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে বিদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিলাসবহুল স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রাক্তন সরকারের মন্ত্রী, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, আমলা এবং ব্যাংক কর্মকর্তারা। বর্তমানে তাদের অনেকেই বিদেশে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, হলমার্ক, বেসিক, বিসমিল্লাহ, এন্যান টেক্স, ক্রিসেন্ট, এস আলম, বেক্সিমকো, সিকদার, নাসা, ওরিয়ন ও নাবিলসহ বিভিন্ন গ্রুপ হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে সরিয়ে নিয়েছে। এসব ঋণের বেশিরভাগই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। শুধু এস আলম গ্রুপই প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা সরিয়েছে, যার মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে খেলাপি ঋণ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০২৩ সালের জুনে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের মার্চে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়, যা দেশের আর্থিক খাতের জন্য এক ভয়াবহ সংকেত।

নতুন সরকার জানায়, পূর্ববর্তী সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য গোপন করত। এখন সব জালিয়াতি ঋণকে খেলাপি হিসেবেই দেখানো হচ্ছে, যার ফলে বাস্তব চিত্র সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত খেলাপি ঋণের চাপ সামাল দিতে ব্যর্থ ব্যাংকগুলো একীভূত করার পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ঋণ জালিয়াতি রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। বড় অঙ্কের ঋণে তদারকি বাড়ানো হয়েছে এবং ঋণ আদায় বা পাচার হওয়া অর্থের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংক খাতকে সুস্থ করতে হলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।