হু হু করে তিস্তার পানি বৃদ্ধি - বন্যার আশঙ্কায় রংপুরের জনপদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ আগস্ট, ২০২৫ এ ৩:৩৬ এএম
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সড়ক সেতুর পশ্চিম তীরবর্তী সেতু রক্ষা বাঁধের বড় একটি অংশ ধসে পড়েছে। বাঁধে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় লালমনিরহাট–রংপুর সড়ক ও পার্শ্ববর্তী হাজারের বেশি পরিবার ঝুঁকিতে পড়েছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি হু হু করে বাড়ছে, যার ফলে তীব্র স্রোতে বাঁধের নিচের মাটি ধুয়ে গিয়ে ব্লকগুলো ধসে পড়ছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সেতু ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতুটি নির্মাণ করে, যা রংপুর ও লালমনিরহাটের মধ্যে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করেছে। কিন্তু বর্তমান ভাঙন নিয়ন্ত্রণে না আসলে শুধু সেতুই নয়, আশপাশের গ্রামগুলোও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। ইতোমধ্যে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরের একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

গঙ্গাচড়ার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘন্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়নসহ কাউনিয়ার বালাপাড়া ও টেপামধুপুর ইউনিয়ন এবং পীরগাছার ছাওলা ইউনিয়নের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার আশঙ্কায় বহু মানুষ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে। পীরগাছা উপজেলার শিবদেব গ্রামসহ আশপাশে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে; শুধু শিবদেবেই ৫০টি বসতবাড়ি, একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তার ভাঙনে হারিয়ে গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ পরিবারের মধ্যে এক বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৩ হাজার টাকা করে সহায়তা দিয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, এ ধরনের সাময়িক সহায়তা যথেষ্ট নয়; স্থায়ী ভাঙন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণই এখন সবচেয়ে জরুরি।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আগামী দু’দিন রংপুর অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসংলগ্ন এলাকায় বন্যার ঝুঁকি অব্যাহত থাকবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, রংপুর ও তিস্তার উজানে ভারি বর্ষণ এবং ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে অতিবৃষ্টি তিস্তার পানি বৃদ্ধির প্রধান কারণ।