কোন পথে মানব সভ্যতা

সাইফুল্লাহ বিন মানসুর
সাইফুল্লাহ বিন মানসুর
১৯ অক্টোবর, ২০২৫ এ ৬:৫১ এএম
ছবি: আজকের প্রথা গ্রাফিক

ছবি: আজকের প্রথা গ্রাফিক

আদর্শ বা নৈতিক ভিত্তি হলো মানব সভ্যতার পিলার বা খুঁটি।পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র,পৃথিবী হেন কোন ক্ষেত্র নেই যেথায় ভিত্তি বা খুঁটি বা পিলার অপ্রাসঙ্গিক।পিতা হলেন পরিবারের পিলার,সমাজপতি সমাজের পিলার রাষ্ট্র প্রধান রাষ্ট্রের পিলার এবং পাহাড় পর্বত হলো পৃথিবীর পিলার।আর আদর্শ বা চেতনা হলো মানব সভ্যতার পিলার।পিলার বা খুঁটি ধ্বংস প্রাপ্ত হলে কোনো প্রতিষ্ঠান আর টিকে থাকতে পারেনা।একই ভাবে আদর্শ ধ্বংস প্রাপ্ত হলে মানব সভ্যতাও ধ্বংস প্রাপ্ত হয়।পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ কোনো না কোনো আদর্শের ধারক।মানুষ যেমনি ভাবে তার হিউম্যান বডিতে জিন বা ডিএনএ ধারন করে অনুরূপ ভাবে একটি আদর্শও প্রতিপালন করে সযত্নে।যেভাবে যত্নের অভাবে একটি প্রজন্ম নষ্ট প্রাপ্ত হয় অনুরূপ ভাবে যত্নের অভাবে মানব সভ্যতা ধ্বংশ প্রাপ্ত হয়।নিঃসন্দেহে মানব সভ্যতার ধ্বংশের মধ্য দিয়েই কেয়ামত সংগঠিত হবে।নিজের সন্তানকে যেভাবে সযত্নে লালন পালন করা হয় মানব সভ্যতার পিলার আদর্শকেও সযত্নে লালান পালন করার প্রয়োজন রয়েছে।মানুষ পারিপার্শ্বিক,সামাজিক, পারিবারিক,অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন পরিমন্ডলে যেমনি ভাবে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে একই ভাবে স্বয়ং নিজের সাথেও অনেক সময় সংগ্রামে লিপ্ত হয়।মানুষ তার স্রষ্টার নিকট সরল পথ প্রাপ্তির দোয়া করে প্রতিনিয়ত।কিন্তু সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রতিযোগিতার মনোভাবের কারণে নিজেই নিজের সরল পথকে করে তুলে জটিল।মাঝে মাঝে আশ্রয় নেয় হিপোক্রেসি বা ভণ্ডামির।

হিপোক্রেসি বা ভণ্ডামির সংজ্ঞাঃ
ভণ্ডামি (হিপোক্রাসি) হলো এমন এক মানসিক ও আচরণগত অবস্থা, যেখানে একজন ব্যক্তি সমাজের সামনে কোনো নৈতিক বা আদর্শমূলক আচরণ প্রদর্শন করে, কিন্তু বাস্তবে নিজে সে আচরণ পালন করে না। সহজভাবে, “যা বলা হয়, তা করা হয় না”- এটি-ই ভণ্ডামির মূল রূপ। এটি এমন এক অবস্থাকে বোঝায় যেখানে কেউ উচ্চ নৈতিক মানদণ্ড বা আদর্শ প্রচার করে, কিন্তু বাস্তবে তার আচরণ সেই মানদণ্ডের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখি হয়। অর্থাৎ, কথা এবং কাজের অমিল,এই দ্বিচারিতাই ভণ্ডামির মূল বৈশিষ্ট্য। এটি মূলত অসততা (insincerity) ও প্রতারণা (deception)-এর একটি রূপ।
যে সকল ক্ষেত্রে হিপোক্রেসি সংঘটিত হয়ঃ
এটি ব্যাক্তি জীবন থেকে সামষ্টিক জীবনেও পরিব্যাপ্ত।জীবনর সরল পথের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্থ করার ফলে পথিক যখন কন্টকাকির্ণ পথে চলতে থাকে তখন বাধ্য হয়েও অনেক ক্ষেত্রে এই হিপোক্রেসির আশ্রয় নিতে হয়।এটা যখন সামষ্টিক পরিসরে পরিব্যাপ্ত হয় তখন মানব সভ্যতা ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হতে থাকে।

হিপোক্রেসির ফলাফলঃ
কোন দল যখন তার মূল আদর্শের প্রচারণা করে কিন্তু সেই আদর্শ থেকে বাস্তবিক পক্ষে দূরে সরে যায় তখন সে দলের ইতি ঘটে।আর যখন এই হিপোক্রেসি মানব জাতিকে পরিপূর্ণরুপে প্রভাবিত করে তখন জাতী সেই সভ্যতার নতুন পথ খুঁজে নেয় অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।যখন কোনো সমাজে আদর্শিক মানুষের অভাব দেখা দেয় তখন সেই সমাজে প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা দেয়।
কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো বর্তমান মানব সভ্যতা হিপোক্রেসি নামক ভয়ংকর পথ অতিক্রম করছে।আষ্টেপৃষ্ঠে মহামরির লেগে আছে সর্বাগ্রে।বিশেষ করে সমাজপতি বা রাজনৈতিক নেতৃত্বে হিপোক্রেসির প্রভাব সবথেকে বেশি লক্ষ করা যাচ্ছে।দেশাত্মবোধের চেতনার ধ্বজাধারী হয়ে দেশি পণ্যের প্রচারণায় যাদেরকে দেখা যায় তারাই আবার বিদেশি পণ্য ক্রয় করে।দেশিয় চিকিৎসার উন্নয়নের বুলি আওরানোর পর আবার ঠান্ডা জড়ের চিকিৎসার জন্য বিদেশেও পারি জমাতে দেখা যায়।এরকম অসংখ্য উদাহরণ সৃষ্টি হচ্ছে প্রতি ক্ষণে।এসব হিপোক্রেসি থেকে মুক্তি না ঘটলে চরম ক্ষতির অপেক্ষা করতে হবে বর্তমান মানব সভ্যতাকে।