চাঁদ দূরে সরে যাচ্ছে, পৃথিবীর সামনে কি বিপদ?


ছবি : সংগৃহীত
চাঁদ ও পৃথিবীর সম্পর্ক বিজ্ঞানীদের কাছে বহু যুগ ধরে গবেষণার বিষয়। বর্তমানে লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা গেছে, প্রতিবছর প্রায় ৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার হারে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে চাঁদ। বর্তমানে পৃথিবী ও চাঁদের দূরত্ব প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার কিলোমিটার হলেও, ধীরে ধীরে এ ব্যবধান বাড়ছে। গবেষকদের মতে, এটি কোনো হঠাৎ পরিবর্তন নয়; বরং কোটি কোটি বছর ধরে চলমান একটি প্রক্রিয়া।
মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী স্টিফেন ডিকারবির ব্যাখ্যানুযায়ী, পৃথিবীর জোয়ার-ভাটার শক্তি ও কৌণিক ভরবেগের কারণে এই দূরত্ব বাড়ছে। পৃথিবীর ঘূর্ণন এবং চাঁদের মহাকর্ষীয় টানের কারণে জোয়ার সৃষ্টি হয়। এই জোয়ার পৃথিবীর ঘূর্ণনকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দিচ্ছে এবং একই সঙ্গে চাঁদের কক্ষপথকে প্রসারিত করছে। এর ফলে চাঁদ প্রতি বছর সামান্য হলেও দূরে সরে যাচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ধীরে ধীরে কমে আসছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতি শতাব্দীতে দিনের দৈর্ঘ্য প্রায় ২ দশমিক ৩ মিলিসেকেন্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ, কোটি কোটি বছর পর দিনের দৈর্ঘ্য আজকের চেয়ে অনেক বেশি হবে। একই সঙ্গে জোয়ার-ভাটার তীব্রতাও কমে আসবে।
তবে আপাতত পৃথিবীর জন্য বড় ধরনের কোনো বিপদের আশঙ্কা নেই। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই পরিবর্তন এত ধীর গতিতে ঘটছে যে মানবসভ্যতার জীবদ্দশায় এর কোনো মারাত্মক প্রভাব পড়বে না। তবুও দীর্ঘমেয়াদে এটি পৃথিবীর পরিবেশ ও প্রাণধারণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে।
চাঁদের এই সরে যাওয়ার বিষয়টি ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনের সময় চাঁদের পৃষ্ঠে স্থাপন করা প্রতিফলক যন্ত্রের মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়। সেই সময় থেকে লেজার রশ্মি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা নিয়মিত পরিমাপ করছেন। তাদের গবেষণায় পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে—চাঁদের এই সরে যাওয়া এক প্রাকৃতিক ও অব্যাহত প্রক্রিয়া, যা মহাবিশ্বের অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের ক্ষেত্রেও দেখা যায়।