বৈশ্বিক শান্তি সূচক ২০২৫

সারা বিশ্বে শান্তি সূচকে সবচেয়ে পিছিয়েছে বাংলাদেশ

আজকের প্রথা প্রতিবেদন
আজকের প্রথা প্রতিবেদন
২৬ আগস্ট, ২০২৫ এ ৯:০৮ এএম
গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০২৫। ছবি:সংগৃহীত

গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০২৫। ছবি:সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) গ্লোবাল পিস ইনডেক্স (জিপিআই)–২০২৫ প্রকাশ করেছে। এ সূচকে বাংলাদেশ গতবারের তুলনায় ৩৩ ধাপ পিছিয়ে বর্তমানে অবস্থান করছে ১২৩তম স্থানে। চলতি বছরের জুন মাসে প্রকাশিত এ সূচকে বাংলাদেশকে শান্তি সূচকে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়া দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইইপির প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক শান্তি সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান স্কোর ২.৩১৮। গত বছর বাংলাদেশ ছিল ৯৩তম অবস্থানে। অন্যদিকে ২.৪৪৩ স্কোর নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান করছে ১২৮তম স্থানে। অর্থাৎ শান্তিপূর্ণতার দিক থেকে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও সামগ্রিক অবস্থানে বড় ধরনের অবনতি হয়েছে। আইইপির হিসাব অনুযায়ী, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক শান্তির গড় স্তর ০.৩৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বৈশ্বিক শান্তির এতটা অবনতি আর দেখা যায়নি। গত ১৭ বছরে গড় দেশভিত্তিক শান্তি সূচক ৫.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা ২০০৮ সাল থেকে ক্রমাগত পতনের ইঙ্গিত দেয়। তবে আশার বিষয় হলো, এ বছর ৭৪টি দেশের শান্তি সূচকে উন্নতি হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আইসল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশের মর্যাদা ধরে রেখেছে। এবারও তালিকার শীর্ষে রয়েছে দেশটি, যার স্কোর ১.০৯৫। এরপর যথাক্রমে আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, স্লোভেনিয়া ও ফিনল্যান্ড শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছে।

অন্যদিকে, সবচেয়ে কম শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে তালিকার নিচের দিকে রয়েছে আফগানিস্তান, ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো ও সুদান। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চল টানা দশম বছরের মতো সবচেয়ে অশান্ত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। গ্লোবাল পিস ইনডেক্স ২০২৫–এর সর্বনিম্ন ১০ দেশের মধ্যে চারটি এই অঞ্চলের।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সূচকে সবচেয়ে বড় পতনের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নাগরিক অসন্তোষ ও সহিংস আন্দোলন। ২০২৪ সালের আগস্টে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হলেও বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠী, ছাত্র আন্দোলন এবং সেনাবাহিনীর দ্বন্দ্বে ক্ষমতার ভারসাম্য এখনও অনিশ্চিত। এই সময়ে ব্যাপক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক নিখোঁজ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে যায়।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা এক হাজার হলেও জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে মৃতের সংখ্যা এক হাজার চারশো জন। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ, ইউক্রেন, রাশিয়া, মিয়ানমার ও কঙ্গোকে শান্তি সূচকে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়া দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইইপি।