মাদকমুক্ত বিশ্ব গড়তে সচেতনতাই হাতিয়ার


আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। জাতিসংঘ ঘোষিত এই দিবসের মূল লক্ষ্য হলো—বিশ্বজুড়ে মাদকের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং একটি মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা।
জাতিসংঘের ঘোষণা ও উদ্দেশ্য
১৯৮৭ সালের ৭ ডিসেম্বর, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ প্রতিবছর ২৬ জুনকে International Day Against Drug Abuse and Illicit Trafficking হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালন করে আসছে জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর (UNODC)।
দিবসটি পালনের মাধ্যমে জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা, সচেতনতা বৃদ্ধি ও গবেষণায় সহায়তা করাই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশে মাদকের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশে মাদকের প্রচলন বহু পুরনো। আশির দশক পর্যন্ত সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানে গাঁজা ও আফিম বিক্রি হতো। কিন্তু গাঁজা নিষিদ্ধ হওয়ার পর হেরোইন ও পরে ফেনসিডিলের মতো মারাত্মক মাদকদ্রব্য জনপ্রিয়তা পায়।
২০০০ সালের পর দেশে প্রবেশ করে ইয়াবা, ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য মাদক এবং সিনথেটিক ড্রাগ। বর্তমানে শহরাঞ্চলে তরুণদের মধ্যে ক্রিস্টাল মেথ, এলএসডি, ডিওবি ও এমডিএমএ সেবনের প্রবণতা বেড়েছে। এসব মাদক অনেক সময় অনলাইন মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে।
শিশু ও কিশোরদের মধ্যে উদ্বেগজনক প্রবণতা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) এবং ইউনিসেফের তথ্য মতে, রাজধানীতেই প্রায় ৭৫ হাজার পথশিশু ড্যান্ডি সেবনে আসক্ত। ২০২২ সালের এক গবেষণায় বলা হয়:
-
৫৮% পথশিশু মাদকাসক্ত
-
১৪% শিশু ১০ বছর বয়সের আগেই মাদক সেবন শুরু করে
-
৩১.৭% গাঁজা ও ১৫.২% ড্যান্ডি সেবন করে
এছাড়া দেশের প্রায় ৭০ লাখেরও বেশি মানুষ কোনো না কোনোভাবে মাদকের সঙ্গে জড়িত। যার মধ্যে প্রায় ৮০% হচ্ছে কিশোর ও তরুণ।
সীমান্ত ও পাচারের চিত্র
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো দিয়ে মাদক দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এর পর তা খুচরা পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মাদক পাচারের মূল পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে মিয়ানমার সীমান্ত এবং পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল।
করণীয় ও সুপারিশ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ নয়, বরং সমন্বিত সামাজিক উদ্যোগেই মাদক সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাবনা:
-
স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় মাদকবিরোধী শিক্ষা চালু করা
-
পাঠ্যবইয়ে সচেতনতা বিষয়ক পাঠ অন্তর্ভুক্ত
-
গ্রাম ও থানা পর্যায়ে মাদকসেবী ও বিক্রেতার তালিকা তৈরি
-
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয়তা ও কঠোর নজরদারি
-
সামাজিকভাবে বয়কটের সংস্কৃতি গড়ে তোলা
-
নাগরিক সেবা গ্রহণে “মাদকমুক্ত ব্যক্তি” সনদ বাধ্যতামূলক করা
-
চারিত্রিক সনদপত্রে মাদক থেকে মুক্ত থাকার অঙ্গীকার যুক্ত করা
আজকের প্রথা/এআর










