উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার আল-খোমস উপকূলে ২৬ বাংলাদেশিকে বহনকারী একটি অভিবাসী নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনায় চারজন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। লিবিয়ান রেড ক্রিসেন্ট জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে উপকূলের কাছে দুটি পৃথক নৌকা দুর্ঘটনার শিকার হয়। প্রথম নৌকাটিতে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, বাকিদের জীবিত অবস্থায় উপকূলে নিয়ে আসা হয়।

একই উপকূলে প্রায় একই সময়ে আরেকটি নৌকা দুর্ঘটনার শিকার হয়। ওই নৌকাটিতে ছিলেন মোট ৬৯ জন অভিবাসী, যার মধ্যে দুজন মিসরীয় এবং ৬৭ জন সুদানি নাগরিক। তাদের মধ্যে আটজন শিশু ছিল। সৌভাগ্যবশত এই নৌকাডুবিতে কোনও হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট।

উদ্ধারকারী দল জানায়, ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারা দ্রুত জীবিতদের নিরাপদে নিয়ে আসে এবং মৃতদের মরদেহ উদ্ধার করে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। ভূমধ্যসাগর হয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে লিবিয়া বহু বছর ধরে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলোর দখলদারিত্বের কারণে অভিবাসীদের ঝুঁকি আরও বেড়েছে।

জাতিসংঘ ও অধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ায় অভিবাসীদের ওপর নিয়মিত নির্যাতন, চাঁদাবাজি ও যৌন সহিংসতার অভিযোগ তুলে আসছে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লিবিয়ার কোস্টগার্ডকে প্রশিক্ষণ, অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তবে সেই কোস্টগার্ডের সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোগসাজশের অভিযোগও রয়েছে।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর অভিযোগ, ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো ধাপে ধাপে রাষ্ট্রীয় উদ্ধার অভিযান কমিয়ে দেওয়ায় ভূমধ্যসাগরের নৌযাত্রা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে সমুদ্রপথে মানবিক উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনাকারী দাতব্য সংস্থাগুলোও কঠোর বিধিনিষেধ ও দমনমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে অভিবাসীরা আগের তুলনায় আরও বেশি ঝুঁকিতে সমুদ্রযাত্রা করতে বাধ্য হচ্ছে।