ঐতিহাসিক বংশাই এখন আবর্জনার ভাগাড় আর সরু হয়ে অস্তিত্ব হুমকিতে


টাঙ্গাইলের মধুপুর পৌর এলাকার অংশের বংশাই নদের দুই ধার দখল হয়ে যাচ্ছে। মধুপুর সরকারি কলেজ ও হাটখোলা এলাকার অংশ।
আজ বিশ্ব নদী দিবস। ‘আমাদের নদী, আমাদের অস্তিত্ব’ এই প্রতিপাদ্যে বিশ্বের শতাধিক দেশে নদী রক্ষার দাবি নিয়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি। নানা কর্মসূচিতে পালিত হচ্ছে আমাদের দেশেও। এ উপলক্ষ্যে মধুপুরের স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল শালবনবার্তা২৪.কম এ বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশির হয়েছে।
ব্রিটিশ বিরোধী ফকির সন্ন্যাস বিদ্রোহের সাথে ঐতিহাসিক যোগসূত্রের বংশাই নদ বিধৌত টাঙ্গাইলের মধুপুরের গড়াঞ্চল। কিন্তু সরু হয়ে অস্তিত্ব হুমকিতে ঐতিহাসিক এই বংশাই। দুই ধার দখলের প্রতিযোগিতায় সরু হয়ে যাওয়া আর প্রতিদিনের ফেলা ময়লা আবর্জনায় ভাগাড়ে পরিণত মধুপুর পৌর এলাকার বংশাইয়ের অংশটুকু।
যতদূর জানা যায়, একটি শাখা হিসেবে ব্রহ্মপুত্রের গতি ধারায় এক সময়ের স্রোতস্বিনী ছিল বংশাই। ব্রহ্মপুত্র জামালপুর সীমানা পেরিয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড় এলাকার বংশাইয়ে মিশেছে। নানা পথ পেরিয়ে যমুনা হয়ে ঢাকার সাভার- ধামরাইয়ে বংশাই রূপেই এর পরিচিতি।
স্থানীয়রা জানান, মধুপুর ও তার গড়াঞ্চলের প্রকৃতিতে বংশাই অবিচ্ছেদ্য নাম। এক সময় বংশাই'র জলে বনের প্রাণিকূল তৃষ্ণা মেটাতো। দশক দুই তিন আগে এ নদ দিয়ে চলতো পাল তোলা নৌকা। বংশাইয়ের দুই তীরে গায়ের বধুর নানা জলকর্ম, দুরন্ত বালক বালিকার জলকেলি ছিল প্রতিদিনের দৃশ্য। কিন্তু এখন বর্ষা মৌসুমেও পানির দেখা মিলে না।কিছু প্রভাবশালী এই বংশাই’র দুই তীর দখল করে স্থাপনা- ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। গোলাবাড়ী বীজ থেকে শুরু করে দামপাড়া গ্রামের বাঁকে বংশাই'র দুই পাড় দখলের এমন দৃশ্য কারো চোখ এড়ায় না। বিশেষ করে কাইতকাই, হাসপাতাল গেইটের সামনে, মধুপুর বাসস্ট্যান্ড ব্রিজ থেকে হাটখোলা, বোয়লী গ্রামের সীমানা এলাকা, দামাপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫ কি.মি. বংশাই’র প্রন্থের দৈন্যতা উদ্বেগজনক। কেউ কেউ দখল নিয়ে ক্রয় বিক্রয় করে নগদ অর্থ পকেটে তুলছেন। শুকনো মৌসুমে প্রবাহ না থাকায় ময়লা আবর্জনা আটকে পানি দুষণ হচ্ছে অনেক স্থানে। সরু হয়ে বংশাই অনেক স্থানে অচেনা মরা খালের মতো হয়ে গেছে। অস্তিত্ব আর ঐতিহ্যের এমন সংকটে বংশাই’র দুই তীর উদ্ধার করে মধুপুরের প্রকৃতিতে বংশাইয়ের ভূমিকাকে ফিরিয়ে দেয়া জরুরী -এমন দাবি পরিবেশবাদী সংশ্লিষ্ট সকলের।
চলতি বছরের ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নদী কৃত্য দিবস উপলক্ষ্যে স্থানীয় নদী রক্ষা সংগঠন ‘বংশাই বাঁচাও আন্দোলন’ এ বংশাই রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লিখিত দিয়েছে। সংগঠনটির দাবি- এই নদটির মধুপুর পৌরসভার অংশের প্রায় ৫ কিলোমিটারের পুরোটাই দখল ও দূষণে মরাখালে পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এতে কিছুদিন পানি প্রবাহ থাকলেও বছরের বাকী সময়টুকু ময়লা আবর্জনায় ভরে থাকে। পৌর শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কঠিন ও অর্ধ শতাধিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বিপদজনক বর্জ্যে সয়লাব থাকে। সেই সাথে গৃহস্থালি বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। দূষণের তীব্র গন্ধে জনজীবন অতিষ্ঠ। মশার উপদ্রুব বৃদ্ধি পাওয়াসহ বিভিন্ন রোগজীবাণু বিস্তার বেড়ে যায়। নদীর জীববৈচিত্র ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। প্রতিনিয়ত মানব জীবনের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। অবৈধ দখলের স্থাপনা উচ্ছেদ, দখল রোধ, পুনঃখনন, মাছের অভয়ারণ্য ঘোষণা, পৌর এলাকার অংশের দুই ধার দিয়ে দৃষ্টি নন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ময়লা আবর্জনা ফেলা নিষিদ্ধকরণসহ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়েছে আবেদনে। বংশাইকে মধুপুরের ফুসফুস বর্ণনা করে নিজেদের বৃহৎ স্বার্থে একে টিকিয়ে রাখার দাবি করেছেন সংগঠনটি।
উল্লেখ্য,উচ্চ আদালতের ২০১১ সালের এক আদেশ মতে নদী জল মহাল দখল বেআইনী। ফৌজদারী ধারায় শান্তিযোগা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মির্জা জুবায়ের জানান, ইতোমধ্যে নদটির দুই ধারের সীমা নির্ধারণ হয়েছে। জামালপুরের সীমান্ত এলাকা থেকে গাজীপুরের সীমানাবর্তী এলাকা পর্যন্ত বংশাই ড্রেজিং কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। মধুপুর পৌর এলাকার অংশের দুইপারের দখল চিহ্নিত করে দখলদারদের তালিকা তৈরি প্রক্রিয়াধীন। দখল এলাকা ও দখলদারদের বিষয়ে পরে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।