সারাদেশে আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) থেকে একযোগে শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। সকাল ১০টায় বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে এ বছরের লিখিত পরীক্ষা, যা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর শুরু হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।

১২ লাখ ৫১ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে
এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রয়েছেন ১০ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী, আলিম পরীক্ষার্থী ৮৬ হাজারের বেশি এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। এ বছর দেশের ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

কমেছে ৮১ হাজার পরীক্ষার্থী
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার পরীক্ষার্থী কমেছে ৮১ হাজার ৮৮২ জন। ২০২৪ সালে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৯৩ জন শিক্ষার্থী।

সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষার জন্য কড়া নিরাপত্তা
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নকলমুক্ত রাখতে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। প্রশ্নফাঁসের গুজব প্রতিরোধ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং গুজব থেকে পরীক্ষার্থীদের রক্ষা দিতে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে ২৪ জুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।

পরীক্ষার্থীদের জন্য ১০টি নির্দেশনা
শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, পরীক্ষার্থীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—

• পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ,

• ওএমআর শিটে সঠিকভাবে তথ্য লেখা ও বৃত্ত ভরাট,

• উত্তরপত্র ভাঁজ না করা,

• শুধুমাত্র সাধারণ ক্যালকুলেটর ব্যবহার,

• এমসিকিউ ও সৃজনশীল পরীক্ষার মধ্যে কোনো বিরতি না থাকা,

• এবং কেন্দ্রে মোবাইল ফোন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

তত্ত্বীয়, এমসিকিউ ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় আলাদাভাবে উত্তীর্ণ হতে হবে। পরীক্ষার্থীরা কেবলমাত্র প্রবেশপত্রে উল্লিখিত বিষয়েই পরীক্ষা দিতে পারবে এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করে পরীক্ষার আসন নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি পরীক্ষার অংশে উপস্থিতি স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক।

ঢাকা বোর্ডের ৩৩ দফা নির্দেশনা
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সুষ্ঠু পরিবেশে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য ৩৩ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নির্দেশনাগুলো হলো—

• প্রতি ২০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য একজন কক্ষ পরিদর্শক,

• শিক্ষার্থীদের তিন ফুট দূরত্বে বসানো,

• নির্ধারিত সেট অনুযায়ী প্রশ্নপত্র খোলা ও অব্যবহৃত সেট ফেরত পাঠানো,

• প্রশ্নপত্র গ্রহণের সময় সংশ্লিষ্ট থানার ট্যাগ অফিসার ও পুলিশের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

এছাড়া পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ, সচেতনতায় মাইকিং, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং নকল প্রতিরোধে পোস্টার লাগানোর নির্দেশনা রয়েছে।

পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন করবেন উপদেষ্টা
আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ভাসানটেক সরকারি কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। এরপর তিনি সরকারি বাংলা কলেজ কেন্দ্রও পরিদর্শন করবেন।

স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তার ওপর জোর
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পরীক্ষা পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সময় পরীক্ষার্থী, কক্ষ পরিদর্শক ও সংশ্লিষ্টদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভ্রাট এড়াতে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসগুলোকে আগেভাগেই প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রে শুধুমাত্র এনালগ কাঁটাযুক্ত ঘড়ির ব্যবহার অনুমতি থাকবে।

নজরদারিতে প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সমন্বয়ক খন্দকার এহসানুল কবির জানান, সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারিতে থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বাড়তি নজরদারি থাকবে। পরীক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে পারে—এমন কোনো তৎপরতা কঠোরভাবে দমন করা হবে।

প্রসঙ্গত, বোর্ডের প্রকাশিত রুটিন অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমানের লিখিত পরীক্ষা চলবে ২৬ জুন থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ১১ থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত।

 

আজকের প্রথা/এআর