হাসিনা সরকারের লুটপাটে শিল্প খাতের দীর্ঘ মন্দা


শেখ হাসিনা। ছবি সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংক খাতে নজিরবিহীন লুটপাট ও দুর্নীতির ফলে দেশের ব্যাংকগুলো মারাত্মক তারল্য সংকটে পড়েছে। এর প্রভাব সরাসরি শিল্প খাতে পড়ছে, যেখানে বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলিক যন্ত্রপাতি আমদানি গত অর্থবছরেই উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। পাশাপাশি এলসি খোলার হারও হ্রাস পেয়েছে। ফলে আগামী কয়েক মাসেও শিল্প যন্ত্রপাতি আমদানির প্রবাহ নিম্নমুখী থাকার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে কিছুটা বৃদ্ধি দেখা গেছে, তবে এর বেশির ভাগই রপ্তানিমুখী শিল্পের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ। অন্যান্য শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বরং কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই শিল্প খাতে মন্দা প্রকট হতে শুরু করে। এর আগে থেকেই কিছুটা মন্দা চলমান ছিল। করোনার ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়, যা দেশের অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলে। ডলার সংকট পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলে, আর এর মাঝেই গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এই ধারাবাহিক আঘাতে শিল্প খাত প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর ধরে টানা মন্দায় রয়েছে।
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এই নিম্নগতি অর্থনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত। উদ্যোক্তারা বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ হ্রাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, উচ্চ সুদের হার এবং সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে ঋণপ্রবাহ কমছে, যা শিল্প উৎপাদনেও প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে সুদের হার ১২ থেকে ১৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা পূর্বের ৮ থেকে ৯ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মৌলিক শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ২৫.৪২ শতাংশ এবং এলসি খোলা কমেছে ২৫.৪১ শতাংশ। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী কয়েক মাসে যন্ত্রপাতি ঘাটতি আরও তীব্র হতে পারে। যদিও রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট শিল্পে যন্ত্রপাতি আমদানি ১২.৪১ শতাংশ বেড়েছে, অন্যদিকে বস্ত্র, ওষুধ, পাট, প্যাকেজিং ও অন্যান্য শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানিতে বড় ধরনের পতন হয়েছে।
শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে মোট ৮.৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও এর বেশিরভাগই রপ্তানিমুখী খাতে কেন্দ্রীভূত। অপরদিকে, মধ্যবর্তী কাঁচামালের আমদানি ৮.৮৫ শতাংশ কমেছে, যা সিমেন্ট, রিরোলিং, জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত শিল্পের মতো খাতে প্রভাব ফেলছে। বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমার পাশাপাশি ঋণ আদায়ের হারও হ্রাস পাচ্ছে, যা শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে সীমিত করে দিচ্ছে।