পরিকল্পনার অভাবে ধস, অভিজ্ঞতার ঘাটতি দেখিয়ে বাঁচার চেষ্টা


ছবি : সংগৃহীত
আবারও উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে? অভিজ্ঞতায় ভরা দলকে ‘তরুণ’ আখ্যা দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা!
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই পুরোনো সমস্যায় ভুগে আবারও সিরিজ হারল বাংলাদেশ। আর সেই পরাজয়ের পর ভরসা দেওয়া হলো পুরোনো অজুহাতে—দল নাকি এখনও ‘তরুণ’, তাদের সময় দিতে হবে!
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীতে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ বলেন,
“আমাদের দল এখনও তরুণ, কিছু খেলোয়াড় নতুন এসেছে... আমাদের সময় দরকার। যদি তাদের সুযোগ দেন, একদিন হয়তো তারা ভালো খেলবে।”
কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
এই দল আসলে কতটা ‘তরুণ’?
শ্রীলঙ্কা সফরের স্কোয়াডে অভিষেক হয়েছে মাত্র দুইজনের—পারভেজ হোসেন ইমন ও তানভীর ইসলাম। অবাক করা ব্যাপার, সিরিজ জয়ের একমাত্র ম্যাচে সবচেয়ে বড় অবদানও এই দুই অভিষিক্তের!
তাসকিন আহমেদ তিনটি বিশ্বকাপে খেলেছেন, মোস্তাফিজের দুটি বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা, মিরাজের নিজেরও দুটি বিশ্বকাপ ও দুটি এশিয়া কাপের অভিজ্ঞতা আছে। শান্ত, হৃদয়, লিটনরাও বিশ্বমঞ্চে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। অভিষিক্ত দুইজন বাদে স্কোয়াডে এমন কেউ নেই, যার আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলার অভিজ্ঞতা নেই।
তবে যদি বয়সকে ‘তরুণ’ বলার মানদণ্ড ধরা হয়, সেটাও বড় প্রশ্ন। কারণ বয়স কম থাকলেই কি ‘অভিজ্ঞতাহীন’ বলা চলে, যখন সেই খেলোয়াড়রা বহু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছে?
আসল সমস্যা চাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা
যেটা আসলে ঢাকার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেটি হচ্ছে মিডল অর্ডারের ধারাবাহিক ব্যর্থতা। বোলিং, ফিল্ডিং বা টপ অর্ডার খানিকটা পাস নম্বর পেতে পারে। কিন্তু মিডল অর্ডার? পুরোপুরি ফেল।
এই মিডল অর্ডারের দুর্বলতা হঠাৎ আসেনি। গেল বছর আফগানিস্তান সিরিজের কথা মনে করুন—১২০/২ থেকে ১৪৩ অলআউট! একই চিত্র দেখা গেছে এই সিরিজেও।
ওয়ানডেতে মিডল অর্ডারের ধস এখন রীতিমতো নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু এই সিরিজেই নয়, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও নিউজিল্যান্ড সিরিজেও ৪-৬ নম্বরের ব্যাটাররা ছিলেন নিষ্প্রভ।
জোড়াতালির মিডল অর্ডার
এই সিরিজে মিডল অর্ডারে খেলানো হয়েছে লিটন, হৃদয়, মিরাজ ও শামীমকে। অথচ স্কোয়াডে স্বীকৃত ব্যাটার ছিলেন সাতজন, যার মধ্যে পাঁচজন ওপেনার!
মিডল অর্ডার স্পেশালিস্ট মাত্র দুজন—হৃদয় ও জাকের আলী। বাকিদের দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে একাদশ সাজানো হয়েছে।
লিটনের মিডল অর্ডারে মানিয়ে না নেওয়া, শামীমের ব্যর্থতা, হৃদয়ের ধীরগতির ফিফটি (স্ট্রাইক রেট ৬৮.২১)—সব মিলিয়ে ‘চেষ্টা চলছে’ এই ছাপটাই পড়ে।
‘তরুণ’ ট্যাগ দিয়ে দায় এড়ানো কি সমাধান?
যখন অধিনায়ক ‘তরুণ দল’ বলে সময় চান, তখন বার্তাটা হয়: প্রক্রিয়াটা ঠিক আছে, শুধু সময় লাগবে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই প্রক্রিয়া কতটা যৌক্তিক? মিডল অর্ডার নিয়ে যেভাবে বারবার জোড়াতালি দেওয়া হচ্ছে, তাতে কীভাবে ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব?
দিনশেষে দলের ব্যর্থতা চাপানো হয় ‘অনভিজ্ঞতার’ ঘাড়ে। অথচ বাস্তবে ব্যর্থ হয়েছে অভিজ্ঞরাই।
যতদিন না মিডল অর্ডারে গঠনমূলক পরিকল্পনা ও সঠিক ব্যাটার নির্বাচন করা হবে, ততদিন শুধু ‘তরুণ’ অজুহাত দিয়ে ব্যর্থতা ঢেকে রাখলে ফলাফল আরও করুণ হবে। সময় থাকতে বোর্ড ও ম্যানেজমেন্টের বাস্তবতা মেনে নেয়া জরুরি। নইলে ‘প্রক্রিয়া’ নয়, ‘পিছু হাঁটা’ই হবে ভবিষ্যৎ।
আজকের প্রথা/ফা-আ