রেজ বেইট কী এবং কেন এটি অনলাইনে এত দ্রুত ছড়ায়


অনলাইনে রাগ–উস্কানিমূলক পোস্ট—‘রেজ বেইট’ কনটেন্ট দ্রুত সামাজিক উত্তেজনা বাড়ায়। ছবি: সংগৃহীত
লিড (৫W+১H): অনলাইনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া উত্তেজনামূলক কনটেন্টের আচরণগত ধরনকে চিহ্নিত করতে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ২০২৫ সালের ‘ওয়ার্ড অফ দ্য ইয়ার’ হিসেবে ঘোষণা করেছে রেজ বেইট শব্দগুচ্ছটি। গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাগ–উস্কানিমূলক পোস্টের ব্যাপকতা বাড়ায় শব্দটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে; যা ব্যবহারকারীদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে কীভাবে প্রভাব ফেলছে, তা নিয়েই এখন নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
প্রথম অনুচ্ছেদ: প্রযুক্তিনির্ভর জীবনধারায় মানুষের দৈনন্দিন যোগাযোগের বড় অংশ সোশ্যাল মিডিয়াকেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। সেই পরিবেশে এমন কনটেন্ট বারবার দেখা যাচ্ছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহারকারীদের রাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে পোস্ট বা ভিডিওর মাধ্যমে রাগ, ক্ষোভ বা বিভাজন সৃষ্টি করা হয়—তারাই মূলত রেজ বেইট হিসেবে পরিচিত। বিষয়টি যে এখন বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ, বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে নির্বাচিত হওয়াই তার প্রমাণ।
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ: রেজ বেইটকে সাধারণত এমন কৌশল হিসেবে বর্ণনা করা হয়, যেখানে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে অর্ধসত্য তথ্য, বিভ্রান্তিকর শিরোনাম বা প্রেক্ষিতবিহীন ভিডিও ব্যবহার করা হয়। উদ্দেশ্য একটাই—মানুষকে মানসিকভাবে উত্তেজিত করা। বিশ্লেষকদের মতে, মানুষের রাগের প্রতিক্রিয়া যত দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তত দ্রুত অ্যালগরিদম সেই কনটেন্টকে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেয়।
তৃতীয় অনুচ্ছেদ: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্ল্যাটফর্মগুলোর অ্যালগরিদম ‘এনগেজমেন্ট’ বা অংশগ্রহণ বাড়াকে অগ্রাধিকার দেয়। ফলে রাগভিত্তিক মন্তব্য, তর্ক অথবা শেয়ার বাড়তে থাকলে অ্যালগরিদম ধরে নেয়—এটি জনপ্রিয় কনটেন্ট। সেই কারণে রেজ বেইট পোস্টগুলো অল্প সময়েই লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। এতে সত্যতা, প্রেক্ষিত বা বিভ্রান্তির ঝুঁকি বিবেচনায় থাকে না।
চতুর্থ অনুচ্ছেদ: সমাজে এর প্রভাবও কম নয়। রেজ বেইট ধর্ম–বিষয়ক ভুল ব্যাখ্যা ছড়ায়, রাজনৈতিক বিভাজন বাড়ায় এবং অনলাইন আলোচনার মান নিচে নামিয়ে দেয়। অনেক তরুণ এই ধরনের কনটেন্টে বারবার এক্সপোজড হয়ে মানসিক চাপ বা ক্লান্তিতে ভুগছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদে এটি সামাজিক আস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং অনলাইন পরিবেশকে অসহিষ্ণু করে তোলে।
পঞ্চম অনুচ্ছেদ: সাধারণ ব্যবহারকারীরা চাইলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে রেজ বেইটের প্রভাব কমাতে পারেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—উত্তেজনামূলক শিরোনামে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া না দেওয়া, তথ্যের উৎস যাচাই করা, সন্দেহজনক পেজ এড়িয়ে চলা এবং ভুয়া বা উস্কানিমূলক পোস্ট রিপোর্ট করা। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম থেকে খবর যাচাই করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার: রেজ বেইট এখন শুধু অনলাইন ট্রেন্ড নয়, বরং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে নির্বাচনের পর বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো এবং দায়িত্বশীল কনটেন্ট ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুললেই এ ধরনের নেতিবাচক কৌশলের প্রভাব কমানো সম্ভব।









