খাদিজা (রা.)’র চারটি গুণ যা নারীদের জন্য চিরন্তন অনুসরণীয়

ধর্ম ডেষ্ক
ধর্ম ডেষ্ক
৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ এ ৪:৪৭ এএম
খাদিজা (রা.)’র জীবনের চারটি অনুকরণীয় গুণ নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা। ছবি: সংগৃহীত

খাদিজা (রা.)’র জীবনের চারটি অনুকরণীয় গুণ নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা। ছবি: সংগৃহীত

ইসলামের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নারীদের একজন ছিলেন হজরত খাদিজা (রা.)। বুদ্ধিমত্তা, সম্মান, নিবেদন, সততা ও দানশীলতার জন্য তিনি মুসলিম উম্মাহর কাছে অনন্য। ইমাম যাহাবি তাকে এভাবেই বর্ণনা করেছেন। নবী মুহাম্মদ (সা.)’র প্রথম স্ত্রী হওয়ার কারণে তিনি ইসলামী ইতিহাসে এক বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তিনি জীবদ্দশায় নবীর একমাত্র স্ত্রী ছিলেন এবং প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী মহিলা। আল্লাহ তায়ালা তাঁর কাছে ফেরেশতা জিব্রাইল (আ.)’র মাধ্যমে বিশেষ সালাম পাঠিয়েছিলেন এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে অনন্য মর্যাদা প্রদান করেছিলেন।

উম্মাহাতুল মুমিনীন হিসেবে খাদিজা (রা.) মুসলিম নারীদের জন্য রোল মডেল। ঘরের কাজ, সংসার পরিচালনা কিংবা সামাজিক দায়িত্বে যে নারীরা এগিয়ে আসেন, শেষ পর্যন্ত আদর্শ হিসেবে খাদিজা (রা.)’র জীবন অনুসরণ করা যায়। নিচে তাঁর চারটি বিশেষ গুণ তুলে ধরা হলো, যা আজকের নারীরাও অনুসরণ করতে পারেন।

১. চরিত্রবান জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়া

খাদিজা (রা.) মক্কার সম্ভ্রান্ত ও বিত্তশালী নারী ছিলেন। তাঁর প্রথম স্বামী মৃত্যুবরণ করার পর অনেক প্রস্তাব পেয়েছিলেন। তবে তিনি সবগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কারণ, তিনি কেবল বিয়ে করাই চাইছিলেন না, বরং চাইছিলেন একজন নৈতিক ও চরিত্রবান মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে। আল্লাহ নবী মুহাম্মদ (সা.)’কে সেই ব্যক্তিরূপে প্রেরণ করেছিলেন। সঠিক মানুষ বেছে নেওয়াই ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সমর্থনের ভিত্তি গড়ে তোলে।

২. বিপদের সময় স্বামীর পাশে সমর্থন ও সান্ত্বনা দেওয়া

যখন হেরা গুহায় জিব্রাইল (আ.) প্রথমবার ওহী নিয়ে নবী মুহাম্মদ (সা.)’র কাছে আসেন, নবী (সা.) ভয় ও উদ্বেগে ভুগছিলেন। সেই মুহূর্তে তিনি কারও কাছে না গিয়ে নিজের স্ত্রী খাদিজার কাছে গিয়ে তার সঙ্গে শেয়ার করলেন।

খাদিজা (রা.) তখন স্বামীর ভয় দূর করে বলেছিলেন, “এমন কিছু হতে পারে না। আল্লাহ কখনও আপনাকে বিপদে ফেলবেন না। আপনি সত্যনিষ্ঠ, দায়িত্বশীল এবং মানুষকে সাহায্যকারী। আল্লাহ আপনার সহায়ক হবেন।”

এই সমর্থন ও প্রেরণা নবীকে বিপদের সময় মানসিক দৃঢ়তা দিত। এ থেকে শেখা যায়, একজন স্ত্রী হতে পারে স্বামীর সবচেয়ে বড় মানসিক ভরসা।

৩. প্রজ্ঞাসম্পন্ন পরামর্শদাতা

শুধু সান্ত্বনা দেওয়াই নয়, খাদিজা (রা.) নবীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন ওয়ারাকা ইবন নওফেলের কাছে যাওয়ার জন্য। ওয়ারাকা ছিলেন জ্ঞানী ও ধর্মশাস্ত্র বিশেষজ্ঞ। তিনি ঘটনাটি বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎবাণীও করেছিলেন।

একজন স্ত্রী হিসেবে জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম, সমাজ ও চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে, তিনি স্বামীর সঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত ও বাস্তবসম্মত পরামর্শ দিতে পারেন। খাদিজা (রা.) এ বিষয়ে নিখুঁত উদাহরণ।

৪. স্বামীর পাশে শক্ত স্তম্ভের মতো থাকা

নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, “যখন সবাই অবিশ্বাসী ছিল, তখন খাদিজা (রা.) আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলেন। অন্যরা আমাকে সাহায্য করেনি, তবে তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ দিয়ে আমাকে সহায়তা করেছেন। আল্লাহ আমাকে তাঁর মাধ্যমে সন্তান দান করেছেন।”

ওহী নাজিলের পর নবী (সা.) সামাজিক অবহেলা ও বৈষম্যের মুখোমুখি হন। খাদিজা (রা.) শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত স্বামীর পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর এই সহমর্যাদা, বিশ্বাস ও সমর্থন আজও নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা।

উপসংহার

খাদিজা (রা.)’র জীবন থেকে নারীরা শিক্ষা নিতে পারেন—সঠিক মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেওয়া, বিপদে সমর্থন দেওয়া, জ্ঞানসম্পন্ন পরামর্শ দেওয়া এবং কঠিন সময়ে পাশে থাকা। এ গুণাবলী শুধু দাম্পত্য জীবন নয়, পুরো সমাজে নারীদের প্রভাবশালী ও মানবিক ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক।

SEO Titles: