ফিরে দেখা জুলাই - দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনতার জাগরণ


শাসন, নিপীড়ন ও বিদ্রোহ-জুলাইতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পতন। ছবি : সংগৃহীত
২০২৪ সালের জুলাই মাস ছিল বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন ও সাধারণ মানুষের দুর্ভোগে ভরা একটি মাস। পুরো মাসজুড়ে দেশজুড়ে চলেছে আন্দোলন, গ্রেফতার, পুলিশের গুলি, সাংবাদিক নির্যাতন ও জনগণের বিক্ষোভ।জুলাইয়ের শুরুতেই ছাত্র, যুব ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলনের ডাক দেয়। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরা রাজপথে নেমে আসে। এই সময় পুলিশের গুলিতে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, যা দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলে।
মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাজধানী ঢাকার শাহবাগ, মতিঝিল, পল্টন, প্রেসক্লাব, বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক ধরপাকড় চালায়, নারীসহ অনেক সাধারণ নাগরিকও নির্যাতনের শিকার হন। সাংবাদিকদের জন্যও এই মাসটি ছিল চরম আতঙ্কের। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সাংবাদিক হামলার শিকার হন। বিশেষ করে রাজপথে আন্দোলন কাভার করতে গিয়ে অনেকে পুলিশের লাঠিপেটা ও হুমকির মুখে পড়েন।
শেখ হাসিনা সরকার এ সময় কোনো সংলাপে না গিয়ে বরং কড়া নিরাপত্তা ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়। তবে সরকারের এই একনায়কতান্ত্রিক আচরণ আরও জনগণের ক্ষোভ উসকে দেয়।জুলাই মাসে দেশের বিভিন্ন জেলায়ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। সিলেট, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন শহরে ব্যাপক ভাঙচুর, অবরোধ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বিরোধীদলীয় নেতারা অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে দমন করছে।
মাসের শেষদিকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে ওঠে। সামাজিক মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য নিয়ন্ত্রণ, গ্রেফতার, নজরদারি আরও বেড়ে যায়। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি গভীরতর হয়।জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রায় সব জেলায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ রাজপথ দখল করে নেয়। বিরোধী দলগুলোর ‘এক দফা’ দাবির মুখে নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নও ব্যর্থ হতে শুরু করে। লাখো মানুষের ঢল ঢাকায় প্রবেশ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
৫ আগস্ট ভোরে পরিস্থিতি আরও অবনতি হলে শেখ হাসিনা গোপনে সরকারি বাসভবন ছাড়েন। পরে জানা যায়, তিনি বিশেষ নিরাপত্তা বহরসহ সড়কপথে সীমান্তে পৌঁছে ভারত সরকারের সহায়তায় দেশত্যাগ করেন। তার দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে সেই দিনই। জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, নিরলস সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়েই এই পতন সম্ভব হয়।
আজকের প্রথা/মেহেদি-হাসান