রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক

তারেক রহমানের ট্রাভেল পাস প্রসঙ্গ কেন সামনে এলো?

রাজনীতি ডেস্ক
রাজনীতি ডেস্ক
২ ডিসেম্বর, ২০২৫ এ ৪:৫৪ এএম
তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঘিরে পাসপোর্ট ও ট্রাভেল পাস বিতর্কে নতুন আলোচনায় রাজনৈতিক মহল। ছবি : সংগৃহীত

তারেক রহমানের দেশে ফেরা ঘিরে পাসপোর্ট ও ট্রাভেল পাস বিতর্কে নতুন আলোচনায় রাজনৈতিক মহল। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার অনিশ্চয়তা ঘিরে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তার জন্য ‘ট্রাভেল পাস’ ইস্যুর সম্ভাবনা। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তিনি এখনো বাংলাদেশের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেননি, তবে কমিশনের অনুমতি পেলে ভোটার হওয়ার সুযোগ রয়েছে। একই সময়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, প্রয়োজনে একদিনেই তারেক রহমানকে ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব। এসব মন্তব্যের পর প্রশ্ন উঠেছে—তারেক রহমানের কাছে কি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই, নাকি অন্য কোনো কারণে ট্রাভেল পাসের প্রয়োজন হতে পারে?

রোববার ঢাকায় কূটনৈতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় তৌহিদ হোসেন জানান, পাসপোর্ট না থাকলে বা মেয়াদোত্তীর্ণ হলে দেশে ফেরার জন্য বাংলাদেশি নাগরিকদের ওয়ান-টাইম ট্রাভেল পাস দেওয়া হয়। তিনি বলেন, “উনি যদি আজকে বলেন যে আসবেন, তাহলে আমরা আগামীকাল ট্রাভেল পাস দিতে পারব। কোনো অসুবিধা নাই।” তার বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আবার সামনে এসেছে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত প্রশ্ন—তারেক রহমানের কাছে কি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই?

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিবরণে দেখা যায়, তিনি ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় আবেদন করেছিলেন এবং তা গৃহীত হয় এক বছরের মধ্যেই। তারও আগে ২০০৮ সালে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যাওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে সবসময় বলা হচ্ছিল—তিনি চিকিৎসাজনিত কারণেই বিদেশে অবস্থান করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি পাসপোর্ট পুনরায় নেননি বা তার জন্য আবেদনও করেননি—এ বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সদিচ্ছা প্রকাশ করতে গিয়ে হয়তো এভাবে বলেছেন। ট্রাভেল পাস বা পাসপোর্ট—কোনো ক্ষেত্রেই সমস্যা হবে না বলে আমরা মনে করি। সরকারেরও সদিচ্ছা আছে।” তবে পাসপোর্ট আবেদন করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমার জানা নেই।”

শনিবার তারেক রহমান ফেসবুকে একটি পোস্টে বলেন, দেশে ফেরা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ ‘অবারিত এবং একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’ তার এই বক্তব্যের পর থেকেই তার দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কার হাতে—এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এর পরদিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টার ট্রাভেল পাস সম্পর্কিত মন্তব্য নতুন করে আলোচনার আগুন জ্বালায়।

এদিকে ট্রাভেল পাস নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, “যাদের পাসপোর্ট নেই, হারিয়ে গেছে বা সময় কম থাকায় নতুন পাসপোর্ট পাওয়া সম্ভব নয়—তাদের কেবল দেশে ফিরতে সাহায্য করার জন্য ট্রাভেল পাস দেওয়া হয়। এটি ওয়ান-ওয়ে।” তাঁর মতে, ট্রাভেল পাস প্রসঙ্গ উঠলে ধরে নিতে হয়, ব্যক্তির কাছে বৈধ পাসপোর্ট নেই।

এমন পরিস্থিতিতে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসতে কোনো আইনগত বাধা নেই। যদি কোনো বাধা থেকেও থাকে, সরকার সহযোগিতা করবে।” তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তার বিষয়েও সরকার সর্বোচ্চ দায়িত্ব নেবে।

অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন বলেছে, আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনে তারেক রহমান বিএনপির ঘোষিত প্রার্থীদের তালিকায় থাকলেও তিনি এখনো ভোটার নন। কারণ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হলে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যায় না। সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে কমিশনে অনুরোধ করা হয়—তারেক রহমান দেশে ফিরলে যেন তাকে ভোটার হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে থাকা প্রবাসী ভোটারদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করতে হলে তাকে মেয়াদসম্বলিত বা মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের কপি, নাগরিকত্ব সনদ বা দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ জমা দিতে হয়।

তবে তারেক রহমানের কাছে বাংলাদেশি কিংবা কোনো বিদেশি পাসপোর্ট আছে কি না—এ বিষয়ে তিনি বা তার দল কোনো ব্যাখ্যা দেননি। আগের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দাবি করা হয়েছিল—তিনি নাকি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। বিএনপি তা তীব্রভাবে অস্বীকার করেছিল।

সব মিলিয়ে বলা যায়, পাসপোর্টের বৈধতা বা অনুপস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর না হলে তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে হলে ট্রাভেল পাসই হতে পারে একমাত্র উপায়। দেশে ফিরে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ ও ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির পর তিনি পুনরায় পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন—এমন ধারণা দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগে আটক থেকে আঠারো মাস কারাবাসের পর ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি পান তারেক রহমান। পরে একই মাসে লন্ডনে গিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সেখানেই অবস্থান করছেন। সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি দ্রুত দেশে ফেরার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন। দলের নেতা-কর্মীরাও বলেছিলেন, তিনি নভেম্বরেই দেশে ফিরবেন। কিন্তু মাস শেষ হওয়ার আগের দিনই তিনি জানিয়ে দেন—তার দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত তার একক নিয়ন্ত্রণে নেই, যা আবারও রাজনৈতিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।