জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদে টালবাহানা চললে রাজপথে নামব


রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের সময়ঃ ছবি সংগৃহীত
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা করা হলে ছাত্র-জনতা আবার রাজপথে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের সময় তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে নানা টালবাহানা শুরু হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই—যদি কেউ মনে করে, যারা রাজপথে নেমেছিল তারা এখন ঘরে ফিরে গেছে, তাহলে তারা ভুল ভাবছেন। সরকার কিংবা অন্য কেউ যদি এমন ধারণা পোষণ করে, তবে তাদের সাবধান করে দিচ্ছি—আবারও রাজপথে ফিরতে ছাত্র-জনতা প্রস্তুত।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা শহীদ আবু সাঈদের কবর থেকে ঘোষণা করছি—বাংলার প্রতিটি পথে ও প্রান্তরে আমরা যাব। ছাত্র-জনতা, তরুণ-শ্রমিক সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আবার রাজপথে নেমে আসার সময় এসেছে। আমরা ৩ আগস্ট ঢাকায় আসছি। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ও শ্রমিকদের নিয়ে রাজধানীতে ঢুকব এবং জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ আদায় করে ছাড়ব।”
এ সময় তিনি বলেন, “পীরগঞ্জের পবিত্র মাটি থেকে আমরা জুলাই পদযাত্রা শুরু করছি, যেখানে শহীদ আবু সাঈদ শায়িত আছেন। তার কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়েই আমাদের এই পদযাত্রার সূচনা। আবু সাঈদ যে সাহসে পুলিশের বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল, তা আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। তার মতোই অন্য সব শহীদেরা আমাদের লড়াইয়ে প্রেরণা জুগিয়ে গেছেন। যুগে যুগে বাংলাদেশের মানুষ আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ওয়াসিমসহ সব শহীদ ও আহতদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে।”
তিনি বলেন, “আজ ১ জুলাই—জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী শুরু হচ্ছে। ঠিক এক বছর আগে, এই দিনে আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি গণতান্ত্রিক বিপ্লবের সূচনা করেছিলাম, যেখানে আবু সাঈদসহ লাখো তরুণ-ছাত্র-জনতা শরিক হয়েছিল।”
নাহিদ বলেন, “শুরুতে এটি কোটা সংস্কার আন্দোলন থাকলেও ধীরে ধীরে তা বৈষম্যবিরোধী গণআন্দোলনে রূপ নেয়। পরিণত হয় এক বিস্ফোরণে, যা গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়ে স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটায়। এই আন্দোলনের গতি ত্বরান্বিত করে শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যু। ১৬ জুলাই শহীদ মিনার থেকে যখন তার মৃত্যুসংবাদ এসেছিল, তখন পুরো দেশ শোক ও ক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল।”
তিনি আরও বলেন, “১৬ জুলাইয়ের পর আন্দোলন অন্য দিকে মোড় নেয়। হাজারো তরুণ-ছাত্র রাজপথে নেমে আসে। তারা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় এবং ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ ও নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা ঘোষণা করে।”
নাহিদ বলেন, “আমরা এই পদযাত্রাকে বলছি—দেশ গড়ার জুলাই পদযাত্রা। আমরা স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটিয়েছি। এখন প্রয়োজন নতুন রাষ্ট্র গঠনের দৃঢ় উদ্যোগ। এই পদযাত্রার মাধ্যমে আমরা ৬৪ জেলার মানুষের সঙ্গে কথা বলব, তাদের মতামত জানব এবং শহীদদের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরব।”
তিনি আরও বলেন, “জাতীয় নাগরিক পার্টি ও গণঅভ্যুত্থনের শরিক ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে আমি শহীদ আবু সাঈদসহ সব শহীদ ও আহতদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। আমাদের দাবি ছিল—বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান। আজ আবু সাঈদের কবর থেকে সেই তিনটি দাবিই আবারও পুনর্ব্যক্ত করছি। একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে, আমাদের প্রয়োজন ন্যায়বিচার, কাঠামোগত সংস্কার এবং গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন।”
আজকের প্রথা/এআর