গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারি


ছবি : আজকের প্রথা গ্রাফিক্স
গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারি করেছে জেলা প্রশাসন। বুধবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়।
বার্তায় জানানো হয়, আজ বুধবার রাত ৮টা থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি থাকবে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েকদিনের সহিংসতা ও অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কারফিউ চলাকালীন সময় জনসাধারণের চলাচল সীমিত থাকবে এবং জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরে বের হতে দেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরো সময় মাঠে থাকবে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।
উল্লেখ্য, চলতি জুলাই মাসের শুরু থেকে 'দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা' কর্মসূচি পালন করে আসছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার ছিল গোপালগঞ্জে দলটির পদযাত্রা। এর আগের দিন মঙ্গলবার এনসিপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় 'মার্চ টু গোপালগঞ্জ'।
এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বুধবার সকাল থেকেই গোপালগঞ্জ সদরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সকালে পুলিশি একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় এবং কাছাকাছি সময়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িবহরেও হামলা চালানো হয়। গোপালগঞ্জ পুলিশ জানিয়েছে, এসব হামলায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন।
দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় এনসিপির সমাবেশে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা মঞ্চ ভাঙচুর করে, সাউন্ড সিস্টেম ও চেয়ার ছুড়ে ফেলে এবং এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এনসিপির কর্মীরা পুলিশের সহায়তায় সরে যান।
হামলার প্রায় আধা ঘণ্টা পর পুলিশি নিরাপত্তায় একই স্থানে সমাবেশ পুনরায় শুরু করে এনসিপি। এতে নাহিদ ইসলাম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।
সমাবেশ শেষে দলীয় নেতারা মাদারীপুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলে আবারও তাদের গাড়িবহরে হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় পুলিশ পিছু হটে যায় এবং এনসিপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে গিয়ে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন।
হামলাকারীরা সমাবেশ মঞ্চ ও আশপাশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে, চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এতে পুরো শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে হামলাকারীরা। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে শহরের বিভিন্ন এলাকায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।
বিকেলের দিকে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়। এরপর সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে হামলাকারীদের সরিয়ে দেয়।
আজকের প্রথা/এআর