চিকিৎসকের ১৭ বছরেও পদোন্নতি না পাওয়ার কারণ ফাঁস


ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিদর্শনের সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে আলোচনায় চিকিৎসক ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণ। ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. আবু জাফর পরিদর্শনে গেলে জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ডা. ধনদেব চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়। পরিদর্শনের সময় ঘটে যাওয়া উত্তপ্ত পরিস্থিতির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
ঘটনার সময় বিরক্ত হয়ে ডা. আবু জাফর ওই চিকিৎসককে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। পরে ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ডা. ধনদেব সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মহাপরিচালকের কাছ থেকে অভিভাবকসুলভ আচরণ প্রত্যাশা করেছিলেন। তার ভাষায়, “ডিজি সাহেব আসার পর হাসপাতালে কী কী সমস্যা রয়েছে তা না জেনে প্রথমেই ভেতরের টেবিল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।”
তিনি আরও বলেন, “আমার বন্ধুরা সবাই অধ্যাপক হয়েছে, কিন্তু আমি বিভিন্ন কারণে পদোন্নতি পাইনি। চাকরি থেকে সাসপেনশন হলেও আমার আপত্তি নেই।” তার এমন মন্তব্য বিষয়টিকে আরও আলোচনায় আনে।
১৭ বছরেও কেন তিনি পদোন্নতি পাননি—তা জানতে খোঁজ নিয়ে পাওয়া গেছে একাধিক তথ্য। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৭ বছরের সময়ে ডা. ধনদেব পদোন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় কোনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি। বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিএর) জমা দেওয়া থেকে শুরু করে পদোন্নতির অন্যান্য শর্ত পূরণেও তিনি ছিলেন উদাসীন।
ডা. বর্মনের ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের দাবি, ময়মনসিংহ শহরে থেকে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে অপারেশন করার সুবিধা ধরে রাখতে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পদোন্নতির আবেদন করেননি। পদোন্নতির জন্য বাধ্যতামূলক ফাউন্ডেশন ট্রেনিং, ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা ও সিনিয়র স্কেল পরীক্ষাও তিনি সম্পন্ন করেননি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “ডা. ধনদেব নিয়ম মেনে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেননি। তাই সরকারিভাবে তিনি পদোন্নতির সুযোগ পাননি।” তবে চলতি বছরের ২৯ জুলাই অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে ইনসিটু স্কিমে তিনি সহকারী অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।
উপসংহার:
ডা. ধনদেবের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক উত্তপ্ত ঘটনার পাশাপাশি অতীতের অবহেলা ও নিয়ম ভঙ্গের অভিযোগ আবারও সামনে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে আলোচনায় বসছে বলে জানা গেছে। ভবিষ্যতে তিনি নিয়ম মেনে পূর্ণাঙ্গ পদোন্নতি পেতে পারবেন কি না—তা এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।









