জাপানে শিক্ষাবৃত্তি ও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
৪ জুলাই, ২০২৫ এ ১২:৪৫ এএম
জাইকার এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়াজাকি কাটসুরার সঙ্গে ড. ইউনূস । ছবিঃ সংগৃহীত

জাইকার এক্সিকিউটিভ সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়াজাকি কাটসুরার সঙ্গে ড. ইউনূস । ছবিঃ সংগৃহীত

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিনিয়োগ, রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা এবং যুব উন্নয়ন—বিশেষ করে শিক্ষা ও খেলাধুলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) নির্বাহী সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়াজাকি কাতসুরার সঙ্গে বৈঠকে এ আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “জাপান সবসময় বাংলাদেশের বিশ্বস্ত বন্ধু। সম্প্রতি আমি জাপান সফর করেছি, যেখানে আমাকে এবং আমার প্রতিনিধি দলকে যে আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা দেখানো হয়েছে, তা গভীরভাবে আমাকে স্পর্শ করেছে।”

জবাবে মিয়াজাকি জানান, এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ জাপানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় জাপানের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দেন।

তিনি বলেন, “জুলাই আন্দোলনে যারা নিহত ও আহত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি।”

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মাতারবাড়ি প্রকল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে একে ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “আমি জাপানে জাইকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছি, আমরা একটি সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপ নিতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “অনেক তরুণ জাপানে কাজ করতে আগ্রহী। কিন্তু ভাষা বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা প্রস্তাব করেছি, জাপানি ভাষা ও কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয় আচরণ শেখাতে জাপানি শিক্ষকরা বাংলাদেশে এসে অথবা অনলাইনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন।”

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “হাজার হাজার তরুণ শরণার্থী শিবিরে কোনো আশাব্যঞ্জক ভবিষ্যত ছাড়া বেড়ে উঠছে। তারা ধীরে ধীরে হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ছে।”

মিয়াজাকি জানান, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে জাইকা বিচারব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য খাতে সহায়তা দিচ্ছে।

এছাড়া, জাইকা বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে একটি আইসিটি-ভিত্তিক মানবসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যা স্থানীয় সরকার, কোম্পানি এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহযোগিতায় পরিচালিত হবে।

যুব উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের নারীরা খেলাধুলায় অসাধারণ সাফল্য অর্জন করছে। গতকালও তারা একটি ম্যাচ জিতে চূড়ান্ত পর্বে উঠেছে। আমরা হোস্টেল সুবিধা বাড়াচ্ছি, তবে তাদের স্বাস্থ্য ও প্রশিক্ষণে সহায়তা দরকার।”

মিয়াজাকি জানান, জাপান ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশে শিক্ষাখাতে স্বেচ্ছাসেবক পাঠাচ্ছে এবং নারীদের খেলাধুলায় আরও সহযোগিতার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে।

বৈঠকের শেষদিকে অধ্যাপক ইউনূস অর্থনৈতিক সংস্কার, রেলপথ নির্মাণ ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ঋণ ও অনুদান চুক্তির জন্য জাপানকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে, আরও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ওডিএ সহায়তার পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ইয়েন থেকে ৪৫০ বিলিয়ন ইয়েনে বৃদ্ধির অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ জাপানের বন্ধুত্ব ও অবদানের কথা চিরদিন মনে রাখবে।”

 

আজকের প্রথা/এআর