৩৬ দিনের কর্মসূচি শুরু আজ


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বছরপূর্তি আজ : ছবি সংগৃহীত
১ জুলাই ২০২৫। আজ ইতিহাসের সেই দিনটির এক বছর, যেদিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে দিতে পথে নামে দেশের হাজারো শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালের এই দিনে সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে শুরু হয় ছাত্রদের লাগাতার আন্দোলন, যা খুব অল্প সময়েই রূপ নেয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অভ্যুত্থানে’। আন্দোলনের এই ঢেউ শেষ পর্যন্ত গিয়ে আঘাত করে সরকারের চূড়ায়। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার অবশেষে ৫ আগস্ট ২০২৪ ক্ষমতা ছাড়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন।
আন্দোলনের সূচনা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর দাবানলের মতো তা ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, বরিশাল ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে। একদিকে বিক্ষোভ, অন্যদিকে সরকারের নির্লিপ্ততা; সেই সুযোগে জন্ম নেয় ইতিহাসের মোড় ঘোরানো ‘জুলাই অভ্যুত্থান’।
রায়ের রেশে রাস্তায়
২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের একটি রায় থেকেই মূলত এই আন্দোলনের বীজ রোপিত হয়। আদালত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি নিয়োগে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে। এরই প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসায় ১ জুলাই শুরু হয় বিরাট ছাত্র গণজাগরণ।
উত্তাল হয়েছিল সব বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে মিছিল, মানববন্ধন, রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশ থেকে শুরু হয় আন্দোলনের বিস্তার। শিক্ষার্থীরা গর্জে ওঠে—
“১৮’র হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার”
“সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে”
“জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে”
“সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা”
“কোটা না মেধা, মেধা মেধা”
“মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই”
একই দিনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও অনুষ্ঠিত হয় বিক্ষোভ, মহাসড়ক অবরোধ, ছাত্র সমাবেশ ও স্লোগানভিত্তিক প্রতিবাদ। ববি গেটে, জাবির ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে, রাবির ক্যাম্পাসে—একযোগে গর্জে ওঠে ছাত্রসমাজ।
উপেক্ষা, বিদ্রূপ—শেষ পর্যন্ত পতন
আন্দোলনের প্রথম দিনেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকার তেজগাঁওয়ে বলেন, “বিএনপির ঘুম হারাম হয়ে গেছে।” সে সময় তিনি ছাত্র আন্দোলনের গুরুত্বকে খাটো করে তির্যক মন্তব্য করলেও আজ তিনিও রাজনৈতিক আশ্রয়ে ভারতের একটি শহরে। দেশের বহু মন্ত্রী-এমপি আত্মগোপনে। ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার।
বর্ষপূর্তিতে স্মরণ ও কর্মসূচির ছড়াছড়ি
এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও অন্তর্বর্তী সরকার ৩৬ দিনব্যাপী স্মরণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মসূচি:
-
১ জুলাই মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় দোয়া ও প্রার্থনা।
-
৫ আগস্ট মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘বিজয় মিছিল’।
-
খুনিদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর।
-
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শহিদদের নামে শিক্ষাবৃত্তি চালু।
বিএনপি:
-
আলোচনাসভা, শহিদ পরিবার সম্মাননা, রক্তদান কর্মসূচি, পথনাটক, ফুটবল টুর্নামেন্টসহ ২২টির বেশি কর্মসূচি।
-
১ জুলাই বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’ শীর্ষক আলোচনা সভা।
-
ভার্চুয়ালি যোগ দিচ্ছেন তারেক রহমান।
এনসিপি:
-
১–৩০ জুলাই পর্যন্ত ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’।
-
শহিদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত।
-
৩ আগস্ট ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ অনুষ্ঠান।
-
৫ আগস্ট পালন হবে ‘ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস’।
গণঅধিকার পরিষদ, ছাত্রশিবির, আপ বাংলাদেশ—সবাই ঘোষণা দিয়েছে মাসব্যাপী নানা কর্মসূচির।
ছাত্রশিবিরের কর্মসূচিতে রয়েছে:
-
আলোচনা সভা, শহিদদের কবর জিয়ারত, স্মৃতিলেখা, পডকাস্ট, ডকুমেন্টারি, রচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা, গ্রাফিতি অঙ্কন, সাহিত্যপত্র ইত্যাদি।
আজকের প্রথা/এম/আল