আড়াই বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি ১০ বছরেও, ব্যয় বেড়েছে ১৬শ কোটি


আড়াই বছরের প্রকল্প ১০ বছরেও হয়নি, ব্যয় বেড়েছে ১৬শ কোটি : ছবি সংগৃহীত
২০১৪ সালে দেশের ১০০টি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (টিএসসি) নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। লক্ষ্য ছিল দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা। এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল আড়াই বছর, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। তবে এক দশক পার হয়ে গেলেও এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ।
এ পর্যন্ত ছয়বার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, তবুও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৭০ শতাংশ। এর ফলে প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয়ের তুলনায় ১৬০১ কোটি টাকা বেশি খরচ হয়েছে। বর্তমানে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভাগ আরও ১৮ মাস সময় ও অতিরিক্ত অর্থ চেয়ে সংশোধিত প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
প্রকল্পটির শুরুতে বরাদ্দ ছিল ৯২৪ কোটি ৩ লাখ টাকা। ধাপে ধাপে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকায়। এখন পর্যন্ত ১০০টির মধ্যে ৭২টি টিএসসি নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে ৬৬টি শর্তসাপেক্ষে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানে এখনো যন্ত্রপাতি স্থাপন, সাব-স্টেশন চালু ও শিক্ষাক্রম শুরু হয়নি।
অগ্রগতি না হওয়ায় প্রথমে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় দুই বছর এবং ব্যয় বাড়ে ১,৩৫৭ কোটি টাকা। পরবর্তীতে আরও তিন বছর মেয়াদ ও ৫৪ কোটি টাকা বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি। এরপর আরও তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।
তবুও কাজ শেষ না হওয়ায় পঞ্চম দফায় ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখন নতুন করে আরও দেড় বছর সময় ও ৫ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। এইভাবে একটি আড়াই বছরের প্রকল্প ১৩ বছরেও শেষ হয়নি।
আরডিপিপির ভাষ্যে দেরির কারণ হিসেবে বলা হয়েছে—বিশ্ববাজারে নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি, দরপত্র প্রক্রিয়ায় বিলম্ব এবং যন্ত্রপাতি সরবরাহে সমস্যা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়, কারিগরি শিক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা বেশি আয় করেন। কিন্তু এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে দেরির কারণে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
শিক্ষা ও শ্রমবাজার বিশ্লেষকদের মতে, যদি দ্রুত যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও জনবল নিয়োগ না হয়, তবে অবকাঠামো থাকলেও প্রকল্প সফল হবে না। মূল লক্ষ্য যেমন—দারিদ্র্য হ্রাস, দক্ষ মানবসম্পদ গঠন, স্থানীয় ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি—তা অর্জন এখনো অনিশ্চিত।
এদিকে প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল কাসেম মোহাম্মদ জাহাংগীর হোসেনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন আল রশীদ বলেন, "এত দীর্ঘ সময়েও প্রকল্প শেষ না হওয়া অগ্রহণযোগ্য। এটি শুধু অর্থের অপচয় নয়, চরম অপচয়। শুরু থেকে যারা এই প্রকল্পে জড়িত, তাদের সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।