ইসরায়েলের পাঁচ সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায় ইরান

আন্তর্জাতিক ডেষ্ক
আন্তর্জাতিক ডেষ্ক
৬ জুলাই, ২০২৫ এ ১:৩৩ এএম
ইরানের সামরিক অভিযান ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইসরায়েলি ভবন। ছবি : সংগৃহীত

ইরানের সামরিক অভিযান ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইসরায়েলি ভবন। ছবি : সংগৃহীত

ইরানে ইসরায়েলের সামরিক স্থাপনায় হামলা নিয়ে নতুন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরান পাঁচটি ইসরায়েলি সামরিক ঘাঁটিতে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে একটি প্রধান বিমান ঘাঁটি, একটি গোয়েন্দা কেন্দ্র এবং একটি লজিস্টিক ঘাঁটি।

শনিবার (৫ জুলাই) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যকার ১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে। যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক রাডার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানিয়েছেন। তবে ইসরায়েলের কড়া সেন্সরশিপ আইনের কারণে দেশটির গণমাধ্যমে এসব হামলার বিস্তারিত প্রকাশ পায়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এসব হামলার বাইরেও ইরানের ৩৬টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে বেসামরিক ও শিল্প অবকাঠামোয় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি করেছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) হামলার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, "সব ইউনিট পুরো অভিযানের সময় কার্যকর সক্ষমতা বজায় রেখেছে।" এ হামলার ফলে ইসরায়েলে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং তাদের বিভিন্ন হোটেলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার চ্যালেঞ্জ

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যুদ্ধের প্রথম আট দিনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের ক্রমবর্ধমান অংশ ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়। বিশ্লেষকদের মতে, এর পেছনে ইরানের উন্নত প্রযুক্তি, একযোগে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কৌশল এবং ইসরায়েলের সীমিত ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র মজুত দায়ী।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় রয়েছে আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং ও অ্যারো সিস্টেম। এগুলো স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘপাল্লার হুমকি প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র মোতায়েন করেছিল থাড ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং লোহিত সাগরে মোতায়েন মার্কিন নৌবাহিনীর ইন্টারসেপ্টর। এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ৩৬টি থাড ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করে, যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার।

ইরানের কৌশল ও প্রতিক্রিয়া

ইরানের দাবি, ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোন একসঙ্গে ব্যবহার করে তারা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করেছে। এক ইরানি কর্মকর্তা জানান, আত্মঘাতী ড্রোনের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যস্ত রাখা, যাতে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছাতে পারে।

ইরানের বিপ্লবী গার্ডের উপপ্রধান মেজর জেনারেল আলি ফাজলি দাবি করেছেন, “ইসলামী বিপ্লবের ৪৭ বছরের ইতিহাসে এবারই আমরা সর্বোচ্চ প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির অবস্থানে রয়েছি। আমাদের ‘ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র শহরগুলো’ অক্ষত রয়েছে এবং এখন পর্যন্ত আমরা মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছি।”

ইসরায়েলের পাল্টা দাবি

অন্যদিকে, ইসরায়েলের একজন সামরিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইরানের প্রায় ৪০০টি ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চারের মধ্যে ২০০টির বেশি ধ্বংস করা হয়েছে, যা তাদের ক্ষেপণাস্ত্র কার্যক্রমে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করেছে। তার মতে, যুদ্ধ শুরুর আগে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মজুত ছিল ২ হাজার থেকে ২,৫০০টি, তবে তারা দ্রুত উৎপাদন বাড়িয়ে তা ৮ হাজার থেকে ২০ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনায় ছিল।

জনমনে উদ্বেগ ও তথ্যপ্রবাহ

ইসরায়েলে এই হামলা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। দেশটির খ্যাতনামা সাংবাদিক রাভিভ ড্রাকার বলেন, “ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সামরিক ঘাঁটি ও কৌশলগত স্থাপনায় আঘাত করেছে—তবে এখনও তা জনসমক্ষে আনেনি ইসরায়েল। এতে জনগণের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতি এবং হামলার সফলতা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।”

ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক কোরি শের জানিয়েছেন, তারা এই যুদ্ধে ইরান ও ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করছেন, যা দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করা হবে। তিনি আরও জানান, রাডার ডেটা বিস্ফোরণের সময় পরিবেশে পরিবর্তন শনাক্ত করে, তবে নিশ্চিত করতে স্থল প্রতিবেদন বা স্যাটেলাইট চিত্র প্রয়োজন হয়।

ইরানে প্রচার এবং দাবি

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ইসরায়েলের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যর্থ প্রমাণ করে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের ফুটেজ প্রচার করা হচ্ছে। আয়রন ডোমকে উপহাস করে তৈরি কার্টুন ও বিপ্লবী সংগীতের সঙ্গে ভিডিওগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সামাজিকমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, এই যুদ্ধে ইসরায়েলের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১,২০০ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে রয়েছে সামরিক, বেসামরিক ও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এই অভিযানকে “বিজয়” বলে অভিহিত করেছেন।

 

আজকের প্রথা/এআর