আশ্রয়প্রার্থীদের নৌকায় চেপে ব্রিটেনে পৌঁছানোর রেকর্ড


চলতি বছর এখন পর্যন্ত ছোট নৌকায় ভেসে ব্রিটেনে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমনের রেকর্ড হয়েছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে বিশ্বের নানা দেশের প্রায় ২০ হাজার আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন। এটি বছরের প্রথমার্ধে আগত অভিবাসীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যা, যা আগের যেকোনো বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, অবৈধ পথে যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের প্রবেশের হার বাড়তে থাকায় বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের নতুন সরকারের জন্য চাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার অভিবাসনের সংখ্যা কমাতে নানা উদ্যোগ নিলেও তা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শুধুমাত্র সোমবারই অন্তত ৮৭৯ জন অভিবাসী দেশটিতে প্রবেশ করেন। এর ফলে চলতি বছরের প্রথমার্ধে মোট আগত অভিবাসীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৯৮২ জনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।
প্রতি বছরই বিপজ্জনক সাগরপথে ছোট নৌকায় চড়ে ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে হাজারো মানুষ ব্রিটেনে প্রবেশের চেষ্টা করেন। যুক্তরাজ্যের ভোটারদের কাছেও এই অবৈধ আগমন এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী স্টারমার মানবপাচারকারী চক্রগুলোকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার করেছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ২৪ হাজারের বেশি অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাজ্য থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পাচারকারীরা বর্তমানে অনুকূল আবহাওয়া এবং নৌকায় অধিকসংখ্যক মানুষ পরিবহনের নতুন কৌশল ব্যবহার করায় সমুদ্রপথে যাত্রা সহজ হয়ে পড়েছে। তবে এই যাত্রা নিরাপদ নয়—গত বছর এভাবে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে গিয়ে অন্তত ৭৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী প্রাণ হারিয়েছিলেন।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের সরকার অভিবাসীদের জন্য ব্যয়বহুল হোটেলে আবাসনের ব্যবস্থা বন্ধ করার ঘোষণাও দিয়েছে। তবে ছোট নৌকায় আগমন রোধে লেবার পার্টির ব্যর্থতা ডানপন্থী অভিবাসনবিরোধী দল রিফর্ম ইউকে-র জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে। দলটির নেতা নাইজেল ফারাজ বর্তমানে জাতীয় জনমত জরিপে শীর্ষে অবস্থান করছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে নাইজেল ফারাজ লেখেন, “এটি একটি রেকর্ড সংখ্যা। আর আমরা যদি আগতদের সবকিছু দিতে থাকি, তাহলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।”
এর আগে, চলতি বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী স্টারমার সামগ্রিক অভিবাসন হ্রাসের প্রস্তাব দেন। তিনি সে সময় সতর্ক করে বলেন, অতিরিক্ত অভিবাসনের ফলে ব্রিটেন ‘অচেনা মানুষের এক দ্বীপে’ পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। যদিও তার এই মন্তব্য ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয় এবং পরে তিনি সে বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
সূত্র: রয়টার্স
আজকের প্রথা/এআর