মধুপুরে নারী উদ্যোক্তা সুমি, ভার্মি কম্পোস্ট সারে স্বপ্ন ছুঁয়া যার লক্ষ্য

খন্দকার বুলবুল(ভ্রাম্যমাণ)প্রতিনিধি
খন্দকার বুলবুল(ভ্রাম্যমাণ)প্রতিনিধি
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ এ ৫:৩৯ এএম
ভার্মি কম্পোস্ট খামারে কাজ করছেন সফল নারী উদ্যোক্তা সুমি খাতুন।

ভার্মি কম্পোস্ট খামারে কাজ করছেন সফল নারী উদ্যোক্তা সুমি খাতুন।

মধুপুর উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেওয়া নারী উদ্যোক্তা সুমি খাতুন আজ ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী। করোনাকালীন চরম অনিশ্চয়তা, দারিদ্র্য ও ব্যক্তিগত দুর্ঘটনার মতো কঠিন বাস্তবতা পেরিয়ে তিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে। মধুপুর উপজেলার ইদিলপুর গ্রামে বসবাসরত এই তরুণী বর্তমানে শুধু নিজের পরিবারই নয়, স্থানীয় কৃষি অর্থনীতিতেও ইতিবাচক অবদান রাখছেন।

সুমি খাতুন ইটভাটার শ্রমিক আব্বাস ও গৃহিনী রাশেদা খাতুন দম্পতির বড় মেয়ে। অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা সুমি পরিবারের হাল ধরতে দীর্ঘদিন বিভিন্ন এনজিওতে স্বল্প বেতনে কাজ করেছেন। তবে ২০২০ সালে করোনার প্রভাবে চাকরি হারালে তিনি চরম দিশেহারায় পড়েন। সেই সংকটময় সময়ে উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর হোসেনের পরামর্শে তিনি ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনের পথে হাঁটেন, যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

ধার করা অর্থে মাত্র ১০টি রিং ও ৩ কেজি কেঁচো দিয়ে শুরু হয় তার উদ্যোক্তা জীবন। প্রথম ছয় মাস কোনো বিক্রি না হলেও তিনি হাল ছাড়েননি। জৈব বর্জ্য, অর্ধপচা গোবর ও কেঁচোর সহায়তায় উৎপাদিত সার ধীরে ধীরে বাজারে পরিচিতি পায়। এক পর্যায়ে তৎকালীন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাকুরা নাম্নীর সহযোগিতায় তার উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট বাজারজাতের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

বর্তমানে সুমির খামারে ১২টি চেম্বারে নিয়মিত ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেছেন একটি পুষ্টি বাগান ও আনারস বাগান। পুষ্টি বাগানে মাল্টা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফলগাছ রয়েছে এবং আনারস বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মরিচ, সরিষা ও কলার চাষ করছেন তিনি, যা তার আয়কে আরও স্থিতিশীল করেছে।

সুমি খাতুন শুধু কৃষি উদ্যোক্তাই নন, সামাজিকভাবেও তিনি সক্রিয়। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর ইয়েস গ্রুপের সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলন ও রক্তদান কার্যক্রমে যুক্ত। তবে ২০২৫ সালে টিআইবির একটি কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। ওই দুর্ঘটনায় তার দুই সহকর্মী প্রাণ হারান এবং সুমির মেরুদণ্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ হাড় ভেঙে যায়। দীর্ঘ চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের পর তিনি আবার কাজে ফিরেছেন।

তার পরিশ্রম ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অর্থনীতিতে স্বাবলম্বী নারী হিসেবে ‘জয়িতা’ পুরস্কার অর্জন করেন সুমি খাতুন। একই সঙ্গে ২০২৪ ও ২০২৫ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ‘ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প পুরস্কার’ লাভ করেন তিনি। তার এই সফলতার পেছনে ব্লক সুপারভাইজার জেরিনা ইয়াসমিন রিপার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।

বর্তমানে সুমি খাতুন আনন্দ মোহন কলেজে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস ও বিভিন্ন প্রকল্প থেকে আরও সহযোগিতা পেলে তিনি ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি এলাকার বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চান। সংগ্রাম, সাহস ও সাফল্যের এই গল্পে সুমি খাতুন আজ মধুপুর অঞ্চলের এক অনুকরণীয় নাম।