ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়, গণমাধ্যমে ‘লজ্জার’ হার


ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে মোরসালিনের গোলে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত
২২ বছর পর আবারও ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার রাতের ম্যাচে শেখ মোরসালিনের একমাত্র গোলে বাংলাদেশ ১–০ ব্যবধানে ভারতকে হারিয়ে দেয়। ম্যাচের শুরু থেকেই লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা, আর গোলের পর মাঠের গ্যালারি থেকে শুরু করে ফুটবলারদের মাঝে উচ্ছ্বাসের যে ঢেউ দেখা যায়, তা ছিল স্মরণীয়। অপরদিকে, ভারতের ডাগআউটে নেমে আসে চরম হতাশা। অনেকটা মাথা নিচু করেই মাঠ ছাড়ে খালিদ জামিলের শিষ্যরা। দেশটির গণমাধ্যমও এই হারকে ‘লজ্জার’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ফুটবল লড়াই শেষে ভারতের প্রধান ধারার সংবাদমাধ্যমগুলো—দ্য হিন্দু, এনডিটিভি, ফার্স্ট পোস্টসহ প্রায় সব গণমাধ্যমেই এই পরাজয়কে ভারতের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অনেক সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, ভারতের ফুটবলের পতনের এক প্রতিচ্ছবি এই হার। ২০০৩ সালে একই মাঠে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে মতিউর মুন্নার গোল্ডেন গোলে বাংলাদেশ ভারতকে পরাজিত করেছিল। দীর্ঘ ২২ বছর পর সেই স্মৃতি ফিরিয়ে এনে এবার মোরসালিনের গোলেই আবারও ভারতের কপালে জোটে হতাশা।
বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক পরিবর্তন ও উন্নয়নও ম্যাচে প্রভাব ফেলেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। ইংল্যান্ড প্রবাসী ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরীর আগমনের পর লাল-সবুজের দলে নতুন ধারার সূচনা হয়। তার প্রভাবেই সাম্প্রতিক সময়ে দলে যুক্ত হয়েছেন সামিত সোম, ফাহামিদুল, জায়ান আহমেদ ও কিউবা মিচেল—যাদের পারফরম্যান্সে ফুটবলে এসেছে নতুন উদ্দীপনা। অন্যদিকে, ভারতের ফুটবল গভীর সংকটে পড়েছে। কিংবদন্তী সুনীল ছেত্রী অবসর ভেঙে দলে ফিরলেও বাংলাদেশ ম্যাচে স্কোয়াডেই জায়গা হয়নি তার। কোচ পরিবর্তন করেও উন্নতি হচ্ছে না ভারতের ফুটবলে।
এশিয়ান কাপ ২০২৭-এর বাছাইপর্বে দুই দলই আগেই বিদায় নিশ্চিত করেছিল। তবে ভারত ম্যাচটিকে দেখেছিল মর্যাদা রক্ষার লড়াই হিসেবে। বাংলাদেশ খেলেছিল গর্ব এবং নবজাগরণের বার্তা ছড়ানোর প্রত্যয়ে। শিলংয়ে প্রথম লেগ ছিল গোলশূন্য ড্র। কিন্তু ঢাকায় ফিরতি লেগে স্পষ্টত ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারত যদিও ১৩৬ নম্বরে, আর বাংলাদেশ ১৮৩-এ—তবুও মাঠের লড়াইয়ে বাংলাদেশ ছিল দৃঢ় ও তেজী।
ম্যাচ শেষে ভারতের সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশকে হারানো সহজ হবে—এমন প্রত্যাশা ছিল ভারতের সমর্থকদের মধ্যে। কিন্তু ভারতের পাঁচ ম্যাচে একটিও জয় না পাওয়ায় সমর্থকদের মধ্যে হতাশা চরমে ওঠে। কোচ খালিদ জামিলের কৌশল নিয়েও চলছে সমালোচনার ঝড়। গ্রুপ ‘সি’-র তলানিতে নেমে ভারতের এ পারফরম্যান্সকে অনেকে বহু বছরের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্বল’ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। অপরদিকে, বাংলাদেশের জন্য এই জয় কেবল তিন পয়েন্ট নয়; বরং দেশের ফুটবলে নতুন আত্মবিশ্বাস ও সম্ভাবনার বার্তা।










