কৃষিকাজ থেকে বিশ্বকাপে মারুফা: নীলফামারীর অনুপ্রেরণার গল্প


কৃষিকাজে বাবাকে সহায়তা করা সেই মেয়ে আজ বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের গর্ব— মারুফা আক্তার। ছবি: সংগৃহীত
একসময় বাবাকে কৃষিকাজে সাহায্য করতেন নীলফামারীর মেয়ে মারুফা আক্তার। সংসারে অভাব-অনটনের দিন পার করেও থেমে থাকেননি তিনি। গ্রামের মানুষের কটূকথা আর বাধা উপেক্ষা করে নিজের স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। দিনের বেলায় মাঠে বাবাকে সহযোগিতা, আর বিকেলে পরিত্যক্ত রেললাইনের পাশে ক্রিকেট অনুশীলন— এভাবেই শুরু হয়েছিল ‘নীলফামারী এক্সপ্রেস’-এর ক্রিকেটযাত্রা।
২০২৫ আইসিসি নারী বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই বাজিমাত করে বাংলাদেশ দল। কলম্বোতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে সাত উইকেটে দাপুটে জয় এনে দেন মেয়েরা। আর সেই জয়ের নেপথ্যে সবচেয়ে বড় নায়িকা ছিলেন পেসার মারুফা আক্তার। ম্যাচসেরা এই তরুণীর প্রথম ওভারেই ইনসুইং ডেলিভারিতে দুটি উইকেট তুলে নেওয়ায় বদলে যায় খেলার মোড়। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন শুধু মারুফা জয়ধ্বনি— “নীলফামারী এক্সপ্রেস” নামেই ভাসছে ফেসবুক টাইমলাইন।
শনিবার মারুফার বাড়ি নীলফামারীর সংগলশী ইউনিয়নের কাদিখোলে গিয়ে দেখা যায়, আনন্দে মেতে আছে পরিবার ও প্রতিবেশীরা। বাবা আইমুল্লা মাঠে কাজের ফাঁকে মেয়ের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে চোখ ভিজে ওঠে। তিনি বলেন, “প্রথমে মেয়ের ক্রিকেট খেলাকে গুরুত্ব দিইনি। ভাবতাম, মেয়ে হয়ে ক্রিকেট খেলে কী হবে! কিন্তু ওর মনোবল আর ভাইদের সহযোগিতায় আজ এত দূর এসেছে।”
মারুফার মা মর্জিনা বেগম বলেন, “খেলার দিন আমি জায়নামাজে বসে দোয়া করি। আল্লাহ ওর মঙ্গল করুন।” ভাই আহসান হাবিব জানান, “আমি সাইকেলে চড়িয়ে তাকে সৈয়দপুর শহরে নিয়ে গিয়ে ক্রিকেট শিখিয়েছি। অনেক কষ্ট করেছে মারুফা।”
প্রতিবেশীরা বলেন, “মারুফা একসময় বাবার সঙ্গে হালচাষে মই টানত, জমিতে কাজ করত। কিন্তু আজ সে পুরো দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আমরা গর্বিত, আমাদের গ্রামের মেয়ে আজ বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশকে জয় এনে দিচ্ছে।”