রিজিক বৃদ্ধির জন্য কুরআন ও হাদিসভিত্তিক ৪টি উপায়

ধর্ম ডেষ্ক
ধর্ম ডেষ্ক
৯ জুলাই, ২০২৫ এ ১১:৫৯ এএম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

মানুষ জীবিকার জন্য বাহ্যিকভাবে পরিশ্রম করে, শিক্ষিত ও দক্ষ হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কেবল যোগ্যতা ও শ্রম দিয়েই যে রিজিক অর্জন হয়—এমন ধারণা ইসলামিক দৃষ্টিকোণে অসম্পূর্ণ। কুরআন ও হাদিসে রিজিকের পেছনে রয়েছে কিছু আত্মিক ও রুহানিয়াতভিত্তিক রহস্য, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য নির্ধারিত।

এমন চারটি আত্মিক গুণ রয়েছে, যেগুলো অনুশীলনের মাধ্যমে রিজিককে বরকতময় এবং ব্যাপক করা সম্ভব। এগুলো কেবল দুনিয়াবি সফলতার জন্য নয়, বরং এক একজন মুমিনের আত্মিক পরিশুদ্ধি ও ঈমানি পরিপূর্ণতার দিকেও পথপ্রদর্শক।

চলুন জেনে নিই সেই গুরুত্বপূর্ণ চারটি গুণ—
১. আল্লাহভীতি (তাকওয়া)
আল্লাহর ভয়ে নিজেকে গোনাহ থেকে বিরত রাখা, অন্তরকে পবিত্র রাখা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করাই তাকওয়ার মূল সত্তা। তাকওয়া শুধু পরকালের মুক্তির মাধ্যম নয়, বরং দুনিয়ার রিজিক ও সমস্যার সমাধানেও এটি চাবিকাঠি।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:
"যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না।"
সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২-৩

সত্যিকারভাবে তাকওয়ার চর্চা একজন মুমিনকে রিজিকের এমন উৎসে পৌঁছে দেয়, যা মানুষের ধারণার বাইরে।

২. আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা (তাওয়াক্কুল)
তাওয়াক্কুল মানে শুধু আল্লাহর ওপর আস্থা রাখা নয় বরং পরিশ্রম করার পর ফলাফলের ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইচ্ছার ওপর সন্তুষ্ট থাকা। এটি মুমিনের অন্তরের প্রশান্তি এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতার নিদর্শন।

 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
"যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে, আল্লাহ তার সব দায়িত্ব নিজে নিয়ে নেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেন, যা তার কল্পনারও বাইরে।"
হায়াতুল মুসলিমিন

তাওয়াক্কুল ছাড়া রিজিকের পেছনে দৌড়ানো দুশ্চিন্তা বাড়ায়, আর তাওয়াক্কুল রিজিকের পথ সহজ করে।

৩. অটল বিশ্বাস (ইয়াকিন বা একিন)
মুমিনের রিজিক বিশ্বাস নির্ভর। আল্লাহর ওপর দৃঢ় ও অটল বিশ্বাস একজনকে আস্থা ও সাহসী করে তোলে, দুশ্চিন্তামুক্ত রাখে এবং রিজিক অর্জনে সচল রাখে।

আল্লাহ বলেন:
"এ কোরআন মানুষের জন্য প্রমাণ, আর যারা নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে তাদের জন্য হেদায়াত ও রহমত।"
সূরা আল-জাসিয়া, আয়াত: ২০

যে ব্যক্তি বিশ্বাস রাখে যে তার রিজিক আল্লাহর হাতে, সে কখনো হতাশ হয় না, বরং নির্ভার চিত্তে চেষ্টা চালিয়ে যায় এবং ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করে।

৪. ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার)
গোনাহ রিজিকের রুদ্ধদ্বার, আর ইস্তিগফার সেই দরজা খুলে দেয়। নিয়মিত তওবা ও ইস্তিগফার একজন মানুষের জীবনে আল্লাহর রহমত ও বরকত ডেকে আনে।

হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন:
"হে আদম সন্তান! তুমি যতক্ষণ আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে আশা রাখবে, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব। যদি তোমার পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছায়, তারপর তুমি ক্ষমা চাও—আমি ক্ষমা করব। আমি পরোয়া করি না।"
মিশকাত শরীফ

রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও প্রতিদিন শতাধিকবার ইস্তিগফার করতেন। ইস্তিগফার শুধু গোনাহ মাফই করে না, বরং জীবনে প্রশান্তি ও রিজিকে বরকত আনে।

রিজিক বাড়ানোর জন্য কেবল বাহ্যিক পরিশ্রম নয়, বরং আত্মিক গুণাবলির চর্চাও জরুরি। তাকওয়া, তাওয়াক্কুল, একিন ও ইস্তিগফার—এই চারটি গুণ একজন মুমিনকে দুনিয়ায় সচ্ছলতা, আত্মিক প্রশান্তি এবং আখিরাতে সফলতা এনে দিতে পারে।

 

আজকের প্রথা/আলআ

Advertisement
Advertisement