৫০ লাখ প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ আগস্ট, ২০২৫ এ ৪:৩১ এএম
ইসির নতুন প্রকল্পে প্রবাসীদের ভোটের স্বপ্ন

ইসির নতুন প্রকল্পে প্রবাসীদের ভোটের স্বপ্ন

গামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চায় সরকার। নির্বাচন কমিশন (ইসি) পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে এই ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে। এ লক্ষ্যে প্রবাসীদের জন্য ভোট গ্রহণ ব্যবস্থা উন্নয়ন ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ‘দেশের বাইরে ভোটদান সিস্টেম উন্নয়ন এবং বাস্তবায়ন’ শীর্ষক একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। ইসির প্রত্যাশা, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।

তবে প্রকল্প প্রস্তাবনায় সমন্বয়হীনতা, অস্পষ্টতা এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্যের অভাব নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন প্রশ্ন তুলেছে। প্রস্তাবে বিদেশে মোট ভোটারের সংখ্যা উল্লেখ থাকলেও, কতজন ভোট দেবেন এবং কোন কোন দেশ থেকে ভোট গ্রহণ করা হবে তা স্পষ্ট নয়। এমনকি বিদেশে ভোট আয়োজনের জন্য কূটনৈতিক সহযোগিতার বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য নেই।

৪৯ কোটি ২১ লাখ টাকার এই প্রকল্প ২০২৪ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। এর মূল লক্ষ্য—প্রবাসী ভোটারদের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি-সমর্থিত পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থা চালু করা, দেশের অভ্যন্তরে প্রযোজ্য ভোটারদের জন্য একই ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং একটি নিরাপদ, কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য অনলাইন ভোটিং পদ্ধতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা। বর্তমানে দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ, এর মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বিদেশে অবস্থান করছেন। দীর্ঘদিন ধরে তারা জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি।

ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডাক বিভাগের সহযোগিতায় প্রবাসীরা অনলাইনে মুখের ছবি ও এনআইডি যাচাই করে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হবেন। এরপর ডাকযোগে ব্যালট পাঠানো হবে, যা কিউআর কোড, ওটিপি এবং নিরাপত্তা যাচাইয়ের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হবে। ভোটাররা ব্যালটে পছন্দের প্রতীক চিহ্নিত করে সিল করা খামে নিকটস্থ পোস্ট অফিসে জমা দেবেন, সেখান থেকে তা ইসির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পৌঁছাবে।

গত ৪ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রস্তাবনায় অস্পষ্টতা, খরচের যৌক্তিকতা এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বিশেষ করে কোন দেশ থেকে ভোট গ্রহণ হবে, সময় অঞ্চলের পার্থক্য কীভাবে সামলানো হবে, এবং বিদেশি সরকারের অনুমতি পাওয়ার বিষয়গুলো প্রস্তাবে অনুপস্থিত বলে জানানো হয়।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা একটি সময়োপযোগী ও ইতিবাচক উদ্যোগ হলেও এর সফল বাস্তবায়নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ডাক বিভাগের সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ ও ভোটার তালিকা আইন ২০০৯ সংশোধনও প্রয়োজন হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপত্তা, সময়মতো ব্যালট পৌঁছানো এবং পরিচয় যাচাই প্রক্রিয়া প্রকল্পটির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে।