সরকারি হাসপাতালগুলোর অনিয়ম বন্ধ করবে কে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৬ জুলাই, ২০২৫ এ ৮:৩৭ এএম
আজকের প্রথায় মতামত । ছবি : আজকের প্রথা গ্রাফিক্স

আজকের প্রথায় মতামত । ছবি : আজকের প্রথা গ্রাফিক্স

জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা অপরিহার্য। সুস্থ ও কর্মঠ ব্যক্তি চেষ্টার মাধ্যমে নিজের ভাগ্য তথা জাতীয় সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। তাই এই দিক থেকে একজন নাগরিকের সুস্থ থাকা প্রয়োজন। সুস্থতার জন্য যেমন প্রয়োজন সুষম খাবার খাওয়া, ঠিক তেমনি অসুস্থ হলে প্রয়োজন যথাযথ চিকিৎসা।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো সরকারি হাসপাতাল। সাধারণত বাংলাদেশের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী সরকারি হাসপাতালগুলোর ওপর বেশি নির্ভরশীল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সরকারি হাসপাতালে দৈনিক অন্তত ১০ লাখ মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা নিতে আসে।

বর্তমানে নানা ধরনের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য চলছে সরকারি হাসপাতালগুলোতে। বিশেষ করে ওষুধ সংকট। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে প্রয়োজনের মাত্র ১ দশমিক ৬২ শতাংশ ওষুধ পায় রোগীরা। আর অধিকাংশ দামি ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়। ফলে রোগীদের চিকিৎসা খরচ বেড়ে যায়।

মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষজন অতিকষ্টে জীবনযাপন করছে। এ অবস্থায় বাড়তি দামে হাসপাতালের বাইরে থেকে ওষুধ কেনা হতাশাজনক। এ ছাড়া হাসপাতালগুলোতে উন্নতমানের যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। অনেক হাসপাতালে উন্নত যন্ত্রপাতি থাকলেও তা অকার্যকর অবস্থায় পড়ে থাকে মাসের পর মাস। গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরীক্ষা রোগীকে উচ্চমূল্যে বাইরের ক্লিনিক ও ল্যাব থেকে করতে বাধ্য করা হয়। এ ক্ষেত্রে অনেকের পক্ষে এই ব্যয় বহন করা সম্ভব হয় না। অনেকে বিক্রি করতে বাধ্য হয় সহায়-সম্বল। কেউ কেউ হয়ে পড়েন ঋণগ্রস্ত।

আবার অনেক রোগী মারা যাচ্ছে শুধু ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসায় অবহেলার কারণে। বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছে ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট, টেকনিশিয়ানসহ নানা পদে লোকবল সংকট। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে ডাক্তার আসেন না। নার্স, ওয়ার্ডবয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় দায়িত্বে অবহেলার ক্ষেত্রে নেই প্রশাসনের কোনো তদারকি ও জবাবদিহি।

অনেক ক্ষেত্রে রোগীরা শিকার হন পদে পদে হয়রানি ও দুর্ব্যবহারের। বড় বড় হাসপাতালে রয়েছে বিভিন্ন শ্রেণির দালাল চক্র। তারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে রোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে আসা সহজ-সরল রোগীদের ভালো চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে নিয়ে যায় বেসরকারি হাসপাতালে। পরে তারা হয়ে পড়ে সর্বস্বান্ত।

সেই সঙ্গে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের আনাগোনা এবং ডাক্তারদের বিভিন্ন উপহার-উপঢৌকনের মাধ্যমে নিজ কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিপিবদ্ধ করানোর মতো অনিয়ম সরকারি হাসপাতালে অহরহ দেখা যায়।

দেশে সীমিত আয়ের মানুষের জন্য চিকিৎসা ব্যয় মেটানো দিন দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর অনেক মানুষ সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, নতুন করে দরিদ্র হচ্ছেন অনেকে।

 

খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল

শিক্ষার্থী

আনন্দ মহন কলেজ, ময়মনসিংহ

 

 

আজকের প্রথা/ইতি

আরও পড়ুন