৫ আগস্ট হোক গণতন্ত্রের প্রতীক - তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
৫ আগস্ট, ২০২৫ এ ৮:৩৫ এএম
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।। ছবি : সংগৃহীত

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।। ছবি : সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে এক আবেগঘন ভাষণে জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট তিনি বলেন, “আজ থেকে এক বছর আগে, ২০২৪ সালের এই দিনে, ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন এবং বাংলাদেশ হয় রাহুমুক্ত। দিনটি স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের জন্য বিজয়ের দিন। এই দিনটি ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এটি সরকারি ছুটি হিসেবে পালিত হবে।”

তারেক রহমান দাবি করেন, একুশ শতকের বাংলাদেশে একটি ভয়ঙ্কর স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যেখানে গুম, খুন, নির্যাতন, মামলা ও নিপীড়ন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার করা হয়েছিল। শত শত পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জনগণের কণ্ঠরোধ করতে দেশে তৈরি করা হয়েছিল গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’, যেখানে বহু মানুষ বছরের পর বছর নিখোঁজ ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ যেমন বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনকে অকার্যকর করে দেশের জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল, ফলে গণতান্ত্রিক চর্চা বাধাগ্রস্ত হয়।অর্থনৈতিক দিক থেকেও দেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে দাবি তারেক রহমানের। তিনি বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থা ধ্বংস করে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়। দুর্নীতি, লুটপাট আর দুঃশাসন ছিল নিত্যদিনের বিষয়।

গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের স্মরণ
তারেক রহমান বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে দেড় হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হন। লক্ষাধিক মানুষ আহত হন, অনেকেই পঙ্গু হয়ে যান। এই অভ্যুত্থান ছিল স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ। যেমন ১৯৭১ ছিল স্বাধীনতা অর্জনের, ২০২৪ ছিল সেই স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই।”

তিনি সব শহীদদের স্মরণ করে বলেন, “তাঁদের রক্তের ঋণ আমাদের ঘোচাতে হবে ন্যায়ভিত্তিক মানবিক বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে শহীদদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।”

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়
তারেক রহমান বলেন, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম শর্ত হচ্ছে জনগণের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে। কেউ যেন স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে এই সরকারের তুলনা না করেন। হিটলারের নাৎসিবাদ যেমন গৌরবের বিষয় নয়, তেমনি পলাতক ফ্যাসিস্টের শাসনকালও গৌরব করার মতো নয়।”

তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্ট যা ঘটেছে, তা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্ব ইতিহাসেও এক নজিরবিহীন ঘটনা। গণভবন, সংসদ, আদালত, এমনকি মসজিদের খতিবও পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শহীদের রক্তে রাজপথ ভিজিয়ে বাংলাদেশ আবারও নতুন স্বপ্নে জেগে উঠেছে।”

শেষে তিনি বলেন, “গণতন্ত্রে মতপার্থক্য থাকবে, কিন্তু যেন তা চরমপন্থা, ফ্যাসিবাদ বা উগ্রবাদের উত্থান না ঘটায়, সে বিষয়ে সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দল ও জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।”