"তবে কি থেমে যাবে সম্ভবনাময় তরুণীর জীবনপ্রদীপ"


মধুপুরের স্বেচ্ছাসেবী বৃষ্টি কর্মকার । ছবি : আজকের প্রথা
জুলাই আন্দোলনের গোড়া দিকে কোটা আন্দোলন যখন প্রবল আকার ধারণ করেছিলো তখন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের মতো আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকেছেন তিনি। জীবনের প্রতি বাঁকে বাঁকে প্রচন্ড মেধার সাক্ষর রেখেছেন। প্রচন্ড অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও সফলভাবে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এন্ড মিডওয়াইফারি ডিগ্রি অর্জন করেছে মধুপুর নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে। দুর্নীতি বিরোধী সামাজিক আন্দোলন টিআইবি'র তরুণ সংগঠন ইয়েস গ্রুপে থেকে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদ্যমান সকল দুর্নীতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন বলিষ্ঠ কন্ঠে। যেন প্রীতিলতা কিংবা মহীয়সী নারী বেগম রোকেয়ার প্রতিচ্ছবি। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্লাটফর্মে তার ছিল স্বতঃস্ফূর্ত ছোটাছুটি। মধুপুর নবদিগন্ত ব্লাড গ্রুপের একজন সক্রিয় স্বেচ্ছাসেবী। অন্যের বিপদে অকাতরে যাপিয়ে পড়েছেন। সাহায্যের জন্য আজ নিজে অসহায় এক পথচারী। ডাক্তারের ভুল অপারেশনে/ চিকিৎসায় লড়ছেন মৃত্যু সাথে। আজ তিনি সাহায্যপ্রার্থী।
বলছিলাম আমাদের স্বজন বন্ধু বৃষ্টি কর্মকার নামের তারুণ্যোদীপ্ত জীবনের কথা। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় এক সম্ভবনাময় তাজা প্রাণ আজ নিস্প্রভ অবস্থা। ইতিহাসটা এমন- বছর তিনেক আগে বৃষ্টি কর্মকারের পিওথলিতে পাথর ধরা পরে। এরপর সেই পাথর অপসারণের জন্য অপারেশন করা হয়। কিন্তু ডাক্তারের অসতর্কতা বা ভুল অপারেশনে তার লিভারের বাইল ডাক্ট কেটে যায়। রোগ নিরাময় না হওয়ায় ২০ দিন পর পুনরায় সম্পূর্ণ পেট ওপেন করে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের এক মাস পরে সেলাই খোলে দেখা গেছে -কাটা অংশ জয়েন্ট না হয়ে পেট একদম খুলে গেছে। এরপর একাধিকবার সেলাই করা হয়। ৫ থেকে ৬ বার একই জায়গায় অস্ত্রোপচার করার ফলে তার স্কিন টিবি হয়। এরপর ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনে দীর্ঘ ছয় মাস ঔষধ খেয়ে তা নিরাময় হয়। বিপত্তি ঘটে ঔষধের ডোজ শেষ হলে পেট অথ্যাৎ অস্ত্রোপচারকৃত অংশে গর্ত হয়ে যায়। একের পর এক বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় কিছু দিন পরপর হসপিটালে ট্রিটমেন্ট নিতে হয়। এমনকি আইসিইউতে তাকে ভর্তি থাকতে হয়। এরপর ২০২৪ সালে MRCP টেস্টের মাধ্যমে তার বাইল ডাস্ট সরু হওয়ার বিষয়টি নজরে আসে। ঔষধ গ্রহণেও তেমন কাজ হচ্ছে না। বাইল ডাস্ট সরু হওয়ার কারণে এক দুই সপ্তাহ পরপরই জন্ডিসসহ পেট ব্যাথা, খিঁচুনি, বমি, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট হয়। সেই সাথে খাবার গ্রহণে, খাবার হজমে সমস্যা হয়। এমতবস্থায় তার লিভারের বাইল ডাস্টে রিং পরাতে হবে ও উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতায় তার সে অবস্থা নেই। টিউশনি করে নিজের ও পরিবারের আর্থিক সাপোর্টার বৃষ্টির উন্নত চিকিৎসা অনেকটা থমকে আছে।
দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর হাসপাতালের বিছানায় কাটিয়ে আজ তিনি ক্লান্ত। তবুও বৃষ্টি কর্মকার বাঁচতে চান। ডাক্তারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি বিদেশে যেতে চান। এমতাবস্থায় তার পরিবার অসচ্ছল হওয়ায় চিকিৎসা বাবদ বিপুল পরিমাণ টাকার ব্যয় বহন করা তার পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য স্বজন বন্ধু বৃষ্টি কর্মকারের চিকিৎসায় সকলের সহযোগিতা আন্তরিকভাবে কাম্য।
লেখক
খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল
শিক্ষার্থী, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ
আজকের প্রথা/ইতি