ডায়াবেটিস কিংবা ওজন কমানোর পথে আম কি বাধা?


ছবি : সংগৃহীত
পুষ্টিবিদ বলছেন, পরিমিত খেলে আম হতে পারে উপকারের উৎসও
লাগছে আমের মৌসুম। গ্রীষ্মের এই পাকা, মিষ্টি ফল নিয়ে যত হইচই থাকুক না কেন, মনের সুখে আম খাওয়ার আনন্দ থেকে অনেকটাই বঞ্চিত ডায়াবেটিস রোগীরা। কারণ হিসেবে বলা হয়, আমে ক্যালোরি বেশি। ১০০ গ্রাম আমে থাকে প্রায় ৬০-৬৫ ক্যালোরি। একটি আম যদি ২৫০ গ্রাম ওজনের হয়, তাহলে সেটি থেকে শরীরে ঢুকে পড়ে প্রায় ১৫০ ক্যালোরি।
তবে পুষ্টিবিদদের মতে, শুধু এই ক্যালোরির হিসাব দেখেই আমকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বরং বুঝে ও পরিমিত খেলে আম হতে পারে উপকারীও।
ক্যালোরি ও ওজন বাড়ার হিসাব
গ্রীষ্মের মৌসুমি ফল হিসেবে আম খাওয়ায় ডায়াবেটিস বা ওজন কমানোর চেষ্টায় থাকা কারওই তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়— যদি তা অতিরিক্ত না হয়। দিনে তিন-চারটি আম খাওয়া কিংবা আম খাওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করলেই কেবল ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
ওজন কমাতে আগ্রহী ব্যক্তিরাও নির্দ্বিধায় খেতে পারেন আম, তবে সেটি হতে হবে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায়। পুষ্টিবিদদের মতে, ওজন কমানো বা বৃদ্ধির পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখে দৈনন্দিন ক্যালোরি গ্রহণ ও ব্যয়ের সমন্বয়। তাই শুধু আম খেলে ওজন বাড়বে—এ ধারণা যেমন সঠিক নয়, তেমনই ওজন কমাতে গিয়ে আম একেবারে বাদ দিয়ে দেওয়াও ঠিক নয়।
ডায়াবেটিস রোগীরাও খেতে পারেন আম
পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলেন, “ডায়াবেটিস রোগীরাও আম খেতে পারেন। স্ন্যাকস হিসেবে আমরা একেবারে নিষেধ করি না। তবে এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। একটা আম—ঠিক আছে, কিন্তু এর বেশি নয়।”
তার ভাষায়, আমে যে শর্করা আছে, তা প্রাকৃতিক। এই ধরনের শর্করা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। তবে আমের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স তুলনামূলক বেশি। তাই খেলেই সঙ্গে সঙ্গে রক্তে চিনি বেড়ে যাবে—এ ধারণাও ভুল।
কখন ও কীভাবে খাবেন আম
পুষ্টিবিদ অনন্যা বলেন, “আম খাওয়ারও নিয়ম আছে। যদি কেউ ভরপেট ভাত, রুটি খাওয়ার পর আম খান, তাহলে শরীরে একসঙ্গে অনেক ক্যালোরি ঢুকে পড়ে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।”
তাই তার পরামর্শ, সকালের নাস্তার বিকল্প হিসেবে কিংবা দুপুর ও রাতের খাবারের মাঝামাঝি সময়ে স্ন্যাকস হিসেবে আম খাওয়াই সবচেয়ে ভালো। এ সময় পেট অনেকটা খালি থাকে, ফলে ক্যালোরির প্রভাবও কম পড়ে।
আমের গুণাগুণ
আম শুধু স্বাদের জন্য ‘ফলের রাজা’ নয়, এতে রয়েছে অসংখ্য স্বাস্থ্যগুণ। এতে আছে ভিটামিন ‘সি’, ‘এ’, ফোলেট (বি৯), ‘ই’, ‘কে’, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান।
অনন্যা ভৌমিক বলেন, “আমে থাকা প্রাকৃতিক চিনি দ্রুত শক্তি জোগায়, ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এতে থাকা ফাইবার ও উৎসেচক খাবার হজমে সহায়ক এবং এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের জন্যও উপকারী।”
তিনি আরও বলেন, “ফল হিসেবে আম অত্যন্ত পুষ্টিকর। এটিকে বাদ দেওয়া মানে অনেক স্বাস্থ্যগুণ থেকে বঞ্চিত হওয়া। তাই পরিমাণ মেনে, সময় বুঝে আম খাওয়াই শ্রেয়।”
আজকের প্রথা/ইতি