বাজেট ২০২৫-২৬, নতুন বাজেটের সমালোচনায় অর্থনীতিবিদরা, সংস্কার ছাড়া উন্নয়ন অসম্ভব


বাজেট ২০২৫-২৬ ছবি সংগৃহীত
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবতা বিবর্জিত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অকার্যকর বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। তাঁদের মতে, বাজেটে রাজস্ব কাঠামোর দুর্বলতা, বিনিয়োগ স্থবিরতা, গায়েবি মামলার ভয়াবহতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতির বিষয়গুলো উপেক্ষিত হয়েছে। যদিও বাজেটে 'সমতা ও টেকসই অর্থনীতি'র কথা বলা হয়েছে, তবে সেটি বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর উদ্যোগ বা কাঠামো নেই বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
গতকাল রাজধানীর গুলশানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী সংলাপে এসব আলোচনা উঠে আসে। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং সভাপতিত্ব করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “গায়েবি মামলার প্রবণতা ব্যবসায়িক পরিবেশে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। বাজেটে এ ধরনের সমস্যার সমাধানে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। একজন ব্যবসায়ী আমাকে জানিয়েছেন, চট্টগ্রামে তিনি এক হত্যা মামলায় গায়েবিভাবে অভিযুক্ত হয়েছেন। এ ধরনের blanket suspicion সমাজকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।”
ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, “প্রতিবছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। এর মূল কারণ কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অভাব।” তিনি আরও বলেন, “বাজেটের আকার ছোট হলেও লক্ষ্য অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হঠাৎ করে ৫.৫ শতাংশে পৌঁছাবে—এটা বাস্তবসম্মত নয়। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের স্থবিরতা, মুদ্রাস্ফীতি ও জ্বালানি সংকট নিরসনে কার্যকর কৌশল বাজেটে নেই।”
তিনি বাজেটের মধ্যবর্তী মূল্যায়নের দাবিও জানান এবং বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট হলেও এর অসামঞ্জস্যতা ও ঘাটতির বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে জনসমক্ষে প্রকাশ করা উচিত।”
সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “বাজেট ঘোষণার পর মতামত জানানোর যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি। ফলে সাধারণ মানুষ ও অংশীজনদের ভাবনা নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছায়নি।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশে রাজস্ব আয়ের বড় অংশ আসে পরোক্ষ কর থেকে, যা সাধারণ জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, প্রত্যক্ষ কর থেকে রাজস্বের পরিমাণ কম। বাজেটে আয় পুনর্বণ্টনের দৃষ্টিভঙ্গি যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি।”
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ বলেন, “বর্তমানে আমরা এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে আছি। ব্যাংক লুট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক সেই লুটের টাকা আবার ব্যাংকে দিয়ে দেয়। অথচ কোনো ব্যাংক কর্মকর্তার বা দায়ী গ্রাহকের শাস্তি হয় না। যার যত বেশি টাকা, সে ততই নিরাপদ—এমন একটি অসংগত অবস্থা চলছে।”
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহসম্পাদক রুমিন ফারহানা বলেন, “এই বাজেট জনকল্যাণমূলক নয়, বরং দুর্বৃত্তদের সুবিধা রক্ষায় তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের কষ্টের কোনো দায় সরকার নিচ্ছে না।”
বিজিএমইএ’র জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইনামুল হক খান বলেন, “রপ্তানি খাতে বাজেট থেকে যে ধরনের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন ছিল, তা প্রতিফলিত হয়নি। আমরা এখনো আশির দশকের ধ্যান-ধারণায় আটকে আছি।